সিটি নির্বাচন নিয়ে টেনশনে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮ মাস আগেই দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনে বেজে উঠেছে ভোটের দামামা। সিটি ভোটের ফলাফলই পাল্টে দিতে পারে রাজপথের হিসাবে-নিকাশ। সিটি করপোরেশনের ভোট থেকেই জেলায়-জেলায় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাই এখন ক্ষমতাসীনরে জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশন ভোটে অংশ নেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও জয় নিয়ে নির্ভার হতে পারছে ক্ষমতাসীনরা। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, বিএনপি সরাসরি দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও ভোটের মাঠে ছদ্মবেশে তাদের প্রার্থী থাকবে। স্বতন্ত্র কিংবা অন্য কোনো উপায়ে বিএনপি সমর্থিত লোকজন নির্বাচনে অংশ নেবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পাঁচ সিটি হাত ছাড়া করতে চাইছে না ক্ষমতাসীনরা। অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন ভোটে জয় পেতে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে দলটিকে। তবে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য পাঁচ সিটিতেই দলীয় প্রার্থী ও নৌকার জয় নিশ্চিত করা। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও বিদ্রোহীদের নিয়ে চিন্তার ভাঁজ আওয়ামী লীগের কপালে। পাঁচ সিটিতে দলীয় কোন্দলই ভোগাতে পারে আওয়ামী লীগকে। পাঁচ সিটি করপোরেশন ভোটে নৌকার প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা। শেষমেষ বাছাই পর্বে ঋণখেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বৈধ হয়ে যায় তার মায়ের মনোনয়ন। নিজের মনোনয়ন টিকতে নাও পারে, সেটা আগে থেকে আঁচ করতে পেরে মায়ের নামে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন সাবেক এ মেয়র। গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলম শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সেখানে তার বিশাল বাহিনীও রয়েছে। গাজীপুরে নৌকার পক্ষে নির্বাচনি কাজ করতে ২৮ সদস্যদের কেন্দ্রীয় একটি সমন্বয়ক টিমও গঠন করেছে দলটি।

এদিকে সিলেটেও একজন প্রবাসী নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় ভেতরে ভেতরে দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। গত সিটি নির্বাচনেও সিলেটে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এবারো ভোটের মাঠে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারেন মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনুসারীরা। কোন্দলের প্রভাব পড়তে পারে ভোটে। এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে নতুনমুখকে হিসেবে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও এর আগে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে প্রার্থী করায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবারো দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে এবার তার কপালে নৌকার মনোনয়ন জোটেনি। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারি নেতাকর্মীদের নিয়েই চিন্তায়। তবে অনেকে বলছেন, শেষমেষ চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ’র পক্ষে জোড়ালো ভাবে ভোটের মাঠে নামতে পারেন তিনি। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীরা নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের পক্ষে অবস্থান নিলেও বাধ সাধতে পারে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। সিটি নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠে নেই ডাবলু সরকারের অনুসারীরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও পাঁচ সিটিতে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটির ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগও দিতে চাইবে না সরকার। পাঁচ সিটি ভোটেই অনেকাংশে নির্ভর করবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ। সিটি ভোটে জয় পেতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মরিয়া লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। নৌকার ভোটে কেউ যাতে ভাগ বসাতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। নৌকার ভোট ভাগ হলেই নিশ্চিত পরাজয়। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের ওপর। হু হু করে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার ও দল আওয়ামী লীগের ভূমিকায় গত ক’মাসে জনমনে ক্ষোভ জমতে শুরু করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্কালে সিটি করপোরেশনের ভোটে জয় পেতে হলে আওয়ামী লীগে হিসাব করে পা ফেলতে হবে। সিটি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ আগাগোড়া যে অবস্থান নিয়ে থাকে, সেই অবস্থানই অব্যাহত থাকবে। দলের কেউ যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী না হন, তা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্দেশনা দিয়েছে। সেজন্য বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা, তার উন্নয়নের মহাযজ্ঞ, সব নির্বাচনে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী যদি হয় আর নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তাহলে আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা-বিজয় ঠেকাতে পারে এমন কোনো শক্তি নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করা। ঈদে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে যদি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি, তাহলে সিটিসহ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হব।’

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।