দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সীমানায় বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) শুনানি করলেও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না এবার। ২০১৮ সালের সংসদীয় আসনের সীমানা দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তবে শুনানি শেষে যৌক্তিক কোনো কিছু পেলে দুই একটি আসনে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল বুধবার নির্বাচন ভবনে প্রথমদিনের শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে শুনানি শেষে।

তিনি বলেন, যতগুলো আবেদন আমাদের কাছে আছে সেগুলো কমিশন শুনবে। আবেদনে যেসব তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয়েছে কমিশন তা বিশ্লেষণ করবে। এখানে একটি নীতিমালা আছে যেমন প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়ে বিবেচনা করে তারপর কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং সেটা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। জুলাই মাসের মধ্যে এটা শেষ করার কথা রয়েছে।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনি আসন সংক্রান্ত বিন্যাসের কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনার আলমগীরের নেতৃত্বে একটি কমিটি ছিল। সেই কমিটি একটা খসড়া প্রস্তাবনা কমিশনে উপস্থাপন করে। যা এরই মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি আকারে দেশবাসীকে অবহিত করা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বেশ কয়েকটি আসনের পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন করেছেন। সেগুলোর শুনানি হচ্ছে।

সচিব বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের নবীনগরের একটি অংশ আরেকটি আসনের সঙ্গে বিভক্তি ছিল। তার পক্ষে বিপক্ষে আবেদন করা হয়েছে। কেউ চাচ্ছেন আগের মতো বহাল রাখার জন্য আবার কেউ চাচ্ছেন কয়েকটি ইউনিয়ন অন্য জায়গা থেকে সংশোধন করে আরেকটি আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করার।

কুমিল্লা-১ আসনের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা, দাউদকান্দি এবং মেঘনা উপজেলা। কুমিল্লা-২ এর মধ্যে রয়েছে হোমনা এবং তিতাস উপজেলা।

কুমিল্লার মেঘনাবাসীদের পক্ষ থেকে ওখানকার আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তার পক্ষে অনেক জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। মেঘনা উপজেলাটিতে তারা প্রশাসনিক এবং ভৌগোলিকভাবে দাউদকান্দি এবং হোমনার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সুতরাং সেটা কুমিল্লা-১ থেকে ২ এর সাথে অন্তর্ভুক্ত করে এবং ২ এর সাথে যে বিদ্যমান তিতাস উপজেলা আছে সেটাকে হোমনা থেকে বাদ দিয়ে দাউদকান্দির সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবি রয়েছে। এটার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা, স্থানীয় সুশীল সমাজ এবং তাদের আইনজীবী বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। কমিশনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে যতগুলো আবেদন পড়েছে সকল পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে কমিশন পূর্ণাঙ্গ মিটিং করে তারপর প্রজ্ঞাপন আকারে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, প্রথমে ছিল দাউদকান্দি উপজেলা। সেখান থেকে হোমনা উপজেলা হয়েছে, তারপরে মেঘনা উপজেলা হয়েছে পরবর্তীতে তিতাস উপজেলা হয়েছে। ২০০৮ সালে বিভক্তির মাধ্যমে দাউদকান্দির সঙ্গে মেঘনা উপজেলা সংযুক্ত করে কুমিল্লা-১ আসন করা হয়েছে এবং হোমনা উপজেলার সঙ্গে তিতাস উপজেলা সংযুক্ত করে কুমিল্লা-২ আসন সংযুক্ত করা হয়েছে। মেঘনার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু হোমনা থেকে বেশিরভাগ অংশ নিয়ে মেঘনা উপজেলা গঠিত হয়েছে, এতে দাউদকান্দি উপজেলা দূরবর্তী হওয়ার কারণে তাদের যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ার কারণে তারা হোমনার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছে।

সচিব বলেন, কুমিল্লাতে এক সময় ১২টি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসনকে সমন্বয় করে ১১টি করা হয়েছে। নাঙ্গলকোটের পক্ষে একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও অন্যরা আবেদন করেছেন। এখানে একটি নতুন আসন অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেছেন তারা। নাঙ্গলকোট যেহেতু একসময় একটি স্বতন্ত্র আসন ছিল সেটাকে পুনর্বহালের আবেদন জানান হয়েছে।

শুনানিতে এসে হাতাহাতি, আহত এক : এদিকে শুনানিতে এসে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের সংক্ষুব্ধরা, যারা দাউদকান্দি ও মেঘনা থেকে এসেছিলেন। তবে বড় কোনো ঘটনা ঘটনার আগেই পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরই মাঝে এক নারীর আঘাতে অন্য এক নারীর কপাল কেটে যায়। এছাড়া একটি হাইয়েস গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর ও কয়েকটি প্রাইভেট কার ধাওয়া করে তারা।

জানা গেছে, গতকাল কুমিল্লা অঞ্চলের আবেদনগুলোর শুনানি হয়। ৭ মে রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জের আপত্তিগুলোর শুনানি হবে। এছাড়া ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলের সীমানা নিয়ে যে আবেদনগুলো পড়েছে সেগুলোর শুনানি হবে ১১ মে। আর বরিশাল, খুলনা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবেদনগুলোর শুনানি হবে ১৪ মে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করেছিল ইসি। তবে খসড়ায় আসনগুলোর বর্তমান সীমানাই বহাল রাখা হয়। নতুন প্রশাসনিক এলাকা (উপজেলা ও ওয়ার্ড) সৃষ্টি হওয়ায় শুধু ছয়টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এসেছে। তবে তাতে কোনো আসনের বর্তমান সীমানার পরিবর্তন হয়নি। শুধু নতুন প্রশাসনিক এলাকার নাম যুক্ত হয়েছে।

ইসির প্রকাশিত খসড়া নিয়ে কারও দাবি আপত্তি থাকলে তা ১৯ মার্চের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছিল। ইসি সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ে ৩৮টি সংসদীয় আসন থেকে মোট ১৮৬টি আবেদন পাওয়া যায়। এর মধ্যে সীমানা বহালের পক্ষে ৬০টি ও সীমানা পরিবর্তন চেয়ে আবেদন পড়ে ১২৬টি।

ইসি কর্মকর্তারা বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের আসনগুলো নিয়ে আবেদনের শুনানি হবে ৭ মে। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর অঞ্চলের আবেদনের শুনানি হবে ১১ মে এবং বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবেদনগুলো নিয়ে শুনানি হবে ১৪ মে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা আবেদনগুলো শুনবেন।

ইসি সূত্র জানায়, ইসি সারা দেশকে ১০টি অঞ্চলে ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে কোনো দাবি-আপত্তি আবেদন পড়েনি। সীমানার পক্ষে-বিপক্ষে আবেদনের মধ্যে কুমিল্লা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৮৪টি, রাজশাহীতে ৪৩টি আবেদন রয়েছে। এ ছাড়া বরিশালে ২৯টি, ঢাকায় ১৮টি, খুলনা ও ফরিদপুর অঞ্চলে ৫টি করে এবং ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১টি করে আবেদন রয়েছে। দাবি-আপত্তির আবেদন নিয়ে শুনানি শেষে আগামী জুনের মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করা হবে।