ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চসিকের নতুন উদ্যোগ

পলিথিনের বিরুদ্ধে ২ মাস প্রচারণার পরই অভিযান

পলিথিনের বিরুদ্ধে ২ মাস প্রচারণার পরই অভিযান

চট্টগ্রাম নগরীকে পলিথিনমুক্ত করার আরেক দফা উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত চসিকের এক সভায় পলিথিন মুক্ত করতে নানা কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন খোদ সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম। সভায় বলা হয়, প্রথমে চলবে পলিথিন বিরোধী প্রচারণা। এরপর শুরু হবে অভিযান। চসিক মেয়র সভায় বলেছেন, নগরকে পলিথিনমুক্ত করতে একসঙ্গে কাজ করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও জেলা প্রশাসন। এক্ষেত্রে আগামী দুই মাস পলিথিনবিরোধী প্রচারণা চালানো হবে। এরপর শুরু হবে অভিযান। অভিযানে বাজারে কোনো দোকানদার বা ব্যবসায়ীর কাছে পলিথিন পাওয়া গেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে অভিযানে বেশি জোর দেয়া হবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, যেসব কারখানায় পলিথিন উৎপাদন হয়, সেখানেই অভিযান চালানো হবে।

নগরীর আন্দরকিল্লা নগর ভবনের কেবি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ এবং স্মার্ট চট্টগ্রাম বিষয়ক’ একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন চসিক মেয়র। পলিথিনবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি ফুটপাত দখলমুক্ত করা এবং জলাধার রক্ষাসহ বিভিন্ন নাগরিক ইস্যুতে চসিক ও জেলা প্রশাসনের একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন চসিক মেয়র ও জেলা প্রশাসক দুজনই।

সভায় মেগা প্রকল্পের আওতায় খালে দেয়া বাঁধ অপসারণ হয়েছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে চসিক, সিডিএ ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় পরিদর্শনেরও সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ওয়াসার পানির লবণাক্ততা নিয়ে ক্ষোভ জানান একাধিক কাউন্সিলর। লবণাক্ত পানির জন্য মানুষ কষ্ট পাচ্ছে জানিয়ে তারা দ্রুত এর সমাধান করতে ওয়াসার প্রতি আহ্বান জানান।

ওয়াসার প্রতিনিধিরা সভায় জানান, কাপ্তাইয়ে পানিপ্রবাহ না থাকায় কর্ণফুলীতে শ্যাওলা আসছে। সেজন্য উৎপাদন কমাতে হয়েছে। এর প্রভাবে হালিশহর-আগ্রাবাদ এলাকায় পানি সরবরাহ কিছুটা কমেছে। তবে ওসব এলাকার পানিতে লবণ নেই। আবার হালদায় সাগরের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। ফলে হালদা থেকে উৎপাদিত পানি শহরের যেসব এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে সেখানে লবণাক্ততা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিকল্প নদী না থাকায় এ মুহূর্তে ওয়াসারও করার তেমন কিছু নেই।

সভায় চসিক মেয়র বলেন, ওয়াসার লবণাক্ত পানি সরবরাহের ফলে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সবাই ওয়াসার সামর্থ্যরে ঘাটতির কথা বলেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ সময়ের অনাবৃষ্টি, কাপ্তাই লেকে পানি শুকিয়ে গিয়ে শ্যাওলার জন্ম আর কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে নোনা পানির প্রবেশের কারণেই যে ওয়াসার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে তা নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। পরিবেশ সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেবল সরকারি উদ্যোগ নয়, সাধারণ মানুষেরও কিন্তু চট্টগ্রামকে পরিত্যক্ত নগরী হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে কাজ করতে হবে।

চসিকের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে করতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য খেলার মাঠ রাখব না, তাহলে তো কোনো সমাধান হবে না। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, যাতে শিশুরা খেলতে পারে, বয়স্করা অবসরে হাঁটতে পারে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও রেলওয়েকে তাদের ভূমিতে খেলার মাঠ ও পার্ক করার জন্য আমাদের দিতে প্রস্তাব দিয়েছি।

তিনি বলেন, মেয়রের পদে বসেই আমি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আগ্রাবাদ ঢেবা ও পাহাড়তলী জোড় ঢেবার সৌন্দর্যবর্ধনে সিটি কর্পোরেশনকে দিতে বলি। তবে রেল কর্তৃপক্ষ সহায়তা না করায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। আমি বলেছি, ভূমির মালিকানা সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে না, আমাকে শুধু ভূমি দিন। আমি কর্পোরেশনের অর্থে পার্ক-মাঠ গড়ে দেব, শিশুদের ভবিষ্যৎ বাঁচাব। রানীর দিঘিকে দখলের হাত থেকে বাঁচানো গেলেও এখনও ষড়যন্ত্র চলছে।

মেয়র বলেন, পলিথিন, প্লাস্টিকের কারণে কর্ণফুলী নদী মৃত্যুর মুখে। কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে না। তাই আগামী তিন মাসের মধ্যে পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করব। আর নদী অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদের পাশাপাশি পুনর্দখল রোধেও পদক্ষেপ নেব।

সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রামকে ঢেলে সাজাতে সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। একদিকে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালাবে। অন্যদিকে উদ্ধার হওয়া ভূমিতে পার্ক, খেলার মাঠ আর রাস্তা বানাবে সিটি করপোরেশন। জলাধার রক্ষা, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ফুটপাত উদ্ধারসহ চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করতে দুটি সংস্থা যৌথভাবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরে পরিণত করতে মেয়রের পরিবেশ নিয়ে জানানো উদ্বেগের সমাধানে কাজ করব। চট্টগ্রামের মেয়রের সহযোগিতায় আমি পলিথিনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করব। পলিথিনবিরোধী অভিযানে বিক্রেতার চেয়ে উৎপাদক পর্যায়ে জরিমানায় বেশি মনোযোগ দেয়া হবে। কারণ, পলিথিনের সরবরাহ না থাকলে মানুষ পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে বাধ্য হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত