ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নালানর্দমা সংস্কারে উদ্যোগ নিতে চসিককে তাগিদ

বর্ষায় জলাবদ্ধতা সহনীয় রাখার চেষ্টায় সিডিএ

বর্ষায় জলাবদ্ধতা সহনীয় রাখার চেষ্টায় সিডিএ

চট্টগ্রাম নগরীতে আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধসের শঙ্কা কাটছে না। চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি হলেও নগরবাসী মনে করছেন, এবারও জলমগ্ন হবে পুরো নগরী। তবে প্রকল্পকাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বলেছে, এবার বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। লোকজন তুলনামূলকভাবে কম দুর্ভোগ পোহাবেন। আগের মতো নিচু এলাকা ব্যাপক হারে জলমগ্ন হবে না বলে মনে করছেন সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে অতিবর্ষণের প্রবণতাও বাড়ছে। বৈরী আবহাওয়ার মৌসুম শুরুর পর শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্প কাজের সুফল সম্পর্কে আগেভাগে মন্তব্য করার সুযোগ নেই। প্রবল বর্ষণ শুরু হলে নগরীর নিচু এলাকায় প্রতি বছর দুর্ভোগ নেমে আসে। সেই সঙ্গে দুর্ভোগ কম হবে- এ ধরনের প্রতিশ্রুতির আর প্রতিফলন দেখা যায় না। তাই এবারও বর্ষা মৌসুম শুরু এবং শেষ হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি বুঝতে হবে। তবেই প্রকল্পকাজের সুফল সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে।

সিডিএ’র প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ শেষ। তাই আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর ভোগান্তি কম হবে। তবে তারা একেবারে দুর্ভোগ হবে না এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি এবার। প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত এক প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পভুক্ত খালগুলোতে কাজের সুবিধার্থে দেয়া বাঁধ ও মাটি অপসারণ করা হয়েছে। তাই খালের কারণে এবার কোথাও জলাবদ্ধতা হবে না। তবে প্রকল্পের বাইরে থাকা শহরের অনেকগুলো ড্রেন এখনো ভরাট রয়েছে। যেগুলো পরিষ্কার না করায় ড্রেন সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি খালে আসতে বাধাগ্রস্ত হয়। এর প্রভাবে কোথাও জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। গেল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ‘খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিডিএ’র পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

নগরীর দামপাড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান। প্রকল্পের উদ্দেশ্য, অগ্রগতি, জলাবদ্ধতার কারণ ও বাধা বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ নানা তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খালে ময়লা ফেললে সিটি করপোরেশন আইনে শাস্তি দেয়ার বিধান আছে। ওনারা যদি ব্যবস্থা নেন তাহলে ময়লা ফেলা বন্ধ হবে। এছাড়া জনসাধারণকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে এরই মধ্যে দেয়া বাঁধ সরানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তার ড্রেনগুলো যদি পরিষ্কার থাকে, তাহলে খালে পানি আসবে না। আমাদের খাল পরিষ্কার আছে। ড্রেনে বাধার জন্য খালে পানি না এসে হয়তো জলাবদ্ধতা হবে এবার। এ সময় সাংবাদিকরা ড্রেন পরিষ্কার না করার জন্য সিটি করপোরেশনকে দোষারোপ করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউকে দোষারোপ করছি না। এক সংস্থার হয়ে অন্য সংস্থাকে দোষারোপ করে জনগণকে কষ্ট দেয়া যাবে না। জনগণের সুবিধার জন্য সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব আছে। সেনাবাহিনী যে অংশে কাজ করছে সেখানে মাটি থাকলে তারা তুলে দেবে। একইভাবে সিটি করপোরেশনের অংশে মাটি থাকলে তারা পরিষ্কার করে দেবে।

তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১টি খাল নিয়ে সিটি করপোরেশন প্রকল্প গ্রহণ করবে। স্লুইচ গেটের কাজ শেষ হওয়ায় আগ্রাবাদ এলাকায় এবার জলাবদ্ধতা হবে না।

সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান বলেন, আমাদের কাজ প্রায় সিংহভাগ শেষ। এর সুফল হিসেবে আগের মতো জলাবদ্ধতা হবে না।

তিনি বলেন, খাল আছে ৫৭টি। আমরা কাজ করছি ৩৬টির। ২১টি কিন্তু বাদ আছে। ওই খালগুলোর কী অবস্থা আপনাদের (সাংবাদিকদের উদ্দেশে) একটু সরেজমিন দেখতে হবে। আমাদের প্রকল্পের কারণে যে চট্টগ্রাম ডুবে যাচ্ছে, ব্যাপারটা তা না। যেহেতু আমাদের প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ শেষ তাই সুফল আসবে। কিন্তু সবার সহযোগিতা লাগবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কিছু জায়গায় দেখলাম পানিতে ডুবে গেছে। কিন্তু তখন খালে পানি ছিল না। সাধারণত খাল পানিতে ভরা থাকলেই পাশের জায়গা ডুবে থাকার কথা। এখানে হয়েছে কী, ওসব এলাকার পানি খালে যায়নি। কারণ, হচ্ছে ছোট ছোট যে ড্রেন সেগুলো ব্লক হয়ে আছে। বর্ষার আগে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা উচিত। অন্যথায় আমরা সুফল পাব না। যে অর্গানাইজেশনের যেটা দায়িত্ব সেটা যদি করি তাহলে এ বছর থেকেই ভালো একটা রেজাল্ট পাওয়া যাবে। হয়তো সম্পূর্ণ রেজাল্ট এ বছর পাব না, আরো অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ভালো রেজাল্ট এ বছর পাব ইনশাআল্ল­াহ। আমাদের ভোগান্তির দিন হয়তো একটু একটু কমে আসছে।

সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, মেগা প্রকল্পের সময় খাল পাড়ে তৈরি করা রিটেইনিং ওয়াল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে মজবুত। ফলে এখন বর্ষা মৌসুমে খাল উপচে পানি তেমন পড়ে না। তাছাড়া যেসব খনন করা খাল দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে পানি প্রবাহিত হতে পারে, সেখানে নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে খুবই কম। তবে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খাল খনন বা খাল পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল তৈরির কাজ কিছু অংশে শেষ হয়েছে। কিছু অংশে এখনো বাকি আছে। ওই এলাকার লোকজনের আশঙ্কা এবারও বর্ষায় খাল উপচে পানি আসবে প্রধান সড়কগুলোয়। এতে সড়কের পাশাপাশি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার কাছে খাজা রোড এলাকায় দেখা যায়, খনন ও রিটেইনিং ওয়াল তৈরি করা খালগুলোতে স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তদারকি না থাকায় বিভিন্ন স্থানে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। এসব আবর্জনা আটকে আছে খালের বিভিন্ন অংশে। যেখানে আবর্জনা আটকে আছে, সেখানে গতি কমেছে পানির প্রবাহে। বর্ষা মৌসুমের ভারি বর্ষণের আগেই খাল পরিষ্কার করা না হলে, খাল উপচে পানি যাবে নিচু এলাকার বাসাবাড়ি ও সড়কে। এতে দুর্ভোগ বাড়তে পারে।

এলাকার বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই সিটি করপোরেশন খাল পরিষ্কার করে ফেলে। এবারও আশা করছি তারা খাল পরিষ্কার করবে। অন্যথায় আবর্জার স্তূপের কারণে খালে পানিপ্রবাহ আটকে যাবে। তাতে দুর্ভোগ বাড়বে এলাকাবাসীর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত