পাঁচ সিটি করপোরেশনে ভোট

দাপ্তরিক ব্যস্ততা বেড়েছে ইসির

গাজীপুর নিয়ে তৎপরতা বেশি

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি কপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কারণেই এসব নির্বাচন নিয়ে ইসির তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুর সিটি নিয়ে দাপ্তরিক ব্যস্ততা বেড়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির। গত বৃহস্পতিবার ছুটির দিনে রাতে মিটিং করে প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে জরুরি বৈঠকে বসেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। এ সভায় গাজীপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীকে এবং নৌকার প্রার্থীকে ‘শেষবারের মতো’ সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এরইমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলকে সতর্ক করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে কমিশন।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার ফের নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে সভা করেন। যা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলীয় পর্যায়ে তাগাদা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি দেয়ার পরও ইসির নির্দেশনা উপেক্ষিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসি। এ অবস্থায় জেল জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ড এবং সর্বোচ্চ প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো আরেকবার সতর্ক করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বলেন, সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার ও সচিবের উপস্থিতিতে গাজীপুরের বিষয়টি নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। সতর্ক করার পরও আচরণবিধি কেন লঙ্ঘন করা হল সে বিষয়ে ব্যাখ্যা তো চাওয়া হচ্ছে।

এদিকে প্রতিমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছে ইসি সচিবালয়। এখন পুনরাবৃত্তি ঘটলে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ৪ মে প্রতিমন্ত্রী সভা করে মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার পরও মেয়র প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।

আচরণবিধি লঙ্গনের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় আমি কোনো সভা করিনি। আচরণবিধিও লঙ্ঘন করিনি। আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে আমি বরাবরই সচেতন এবং এ বিষয়ে আমি সব সময় সহযোগিতা করে আসছি। কারো পক্ষে প্রচারে অংশ নেননি বলে দাবি করেন তিনি।

জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন কিছুটা টালমাটাল থাকলেও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথমদিকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে চায় ইসি। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছে কমিশন। তবে তার আগে একযোগে পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে যাচ্ছে ইসি। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও স্থানীয় এই ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। বিশেষ করে, সংসদ ভোটের আগে এই নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো ধরনের বিতর্কের মুখে পড়তে না হয় সে দিকে সতর্ক ইসি।

গাজীপুর ছাড়া বাকি চার সিটিতে এখনো ভোটের বেশ বাকি। তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রতিনিয়ত ভোট নিয়ে কোনো না কোনো নির্দেশনা, বিজ্ঞপ্তি, বক্তব্য দিচ্ছে কমিশন। কখনো সরকারদলীয় প্রার্থীকে শোকজ, কোনো চিঠিতে আবার স্থানীয় প্রশাসনকে আচরণবিধি মানাতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা, আবার কোনোটিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাহসের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে ইসি।

অন্যদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনে আগামী জুনে নির্বাচন হলেও এখনই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মাঠে নেমে গেছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তার পক্ষে ব্যানার-পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বরিশাল। নিয়মের বাইরে হওয়ায় তা অপসারণে নির্দেশনা দিতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। গত ৩ এপ্রিল পাঁচ সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

কোন সিটিতে কি হাল : একযোগে পাঁচ সিটির ভোটের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই সরগরম রাজনৈতিক অঙ্গন। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বলায় সেই অর্থে উত্তাপ নেই। তবে গাজীপুরে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হওয়ায় বেশ আলোচনায় আসে এই সিটির ভোটের কথা। যদিও ঋণখেলাপির অভিযোগে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আলোচনা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে তার প্রার্থিতার আপিল নামঞ্জুর হয়েছে। বিকালে ঢাকা বিভাগীয় নির্বাচন কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম তার আপিল আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে শেষ পর্যন্ত আপিলে ফিরে না পেলেও যদি তার মা মাঠে থাকেন তাহলেও শেষ অবধি উত্তাপ থাকবে গাজীপুরে।

অন্যদিকে বরিশালে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর বদলে তার চাচাকে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে শুরুতে টক অব দ্য কান্ট্রি ছিল এখানকার ভোটের আলাপ। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হচ্ছে।

যদিও গাজীপুরে বিএনপি নেতার ছেলে ও বরিশালে বিএনপি দলীয় সাবেক মেয়রের ছেলে নির্বাচনের মাঠে নেমে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এর বাইরে সিলেটে আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন টানা দুইবারের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। দল ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও লন্ডন থেকে ফিরে এসে তিনি বিশেষ প্রেক্ষাপটের কথা বলে ভোটে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এছাড়া রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়রের সঙ্গে সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল লড়তে পারেন এমন গুঞ্জন আছে। আবার বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নাদিম মোস্তফার ভাইও প্রার্থী হতে পারেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে খুলনার আওয়ামী লীগের মেয়রের সঙ্গে আগে মেয়র পদে লড়াইয়ে বিএনপির অব্যাহতি পাওয়া নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মাঠে নামার আলোচনাও আছে। যদিও এই দুই সিটিতে শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেয়রদের সঙ্গে কারা লড়বেন- তা জানতে আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে।