ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

আজমত উল্লার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন

‘জ্ঞাতসারে আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি’
আজমত উল্লার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন

আচরণবিধি ভঙ্গের অপরাধে তলব করা গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভবিষ্যতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না করার প্রতিশ্রুতি পাওয়ায় নতুন কোনো তদন্তে যাচ্ছে না কমিশন। আর জ্ঞাতসারে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করিনি বলে দাবি করেছেন আজমত উল্লা খান। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিকাল ৩টায় ইসিতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেন আজমত উল্লা খান।

ইসির কাছে ব্যাখ্যা দেয়ার পর আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। প্রার্থী হিসেবে নয়, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে একটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য আমার তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। আমার কমিটমেন্ট নির্বাচনি আচরণবিধি আমি পালন করব। আমার বক্তব্য উনারা নিয়েছেন। এখন উনারা সিদ্ধান্ত নেবেন। যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেই সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেব।

আচরণবিধি ভেঙেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার বক্তব্য কমিশনে তুলে ধরেছি। উনাদের রেজাল্ট আসুক, তারপর বুঝতে পারবেন।

প্রতীক পাওয়ার আগেই মন্ত্রীরা নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। এটি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেই অবস্থানটিও তুলে ধরেছি যে সভা উনারা করেছেন, অজ্ঞতার কারণে হতে পারে, যেহেতু সেটি সিটি করপোরেশনের বাইরে। আমি আমার অবস্থানটা পুরোপুরি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। সিদ্ধান্ত তো নির্বাচন কমিশন নেবেন।

ভুল স্বীকার করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জ্ঞাতসারে নির্বাচনি বিধিমালা লঙ্ঘন করিনি। আমি এই কথাটি নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট করে বলেছি এবং ভবিষ্যতেও আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ হবে না, সেটি আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এটি ঠিক নয়। আমি কোনো মিছিল নিয়ে গেছি সেটি দেখাতে পারবেন? আপনাদের বুঝতে হবে যে, আমি পাঁচজন নিয়ে গেছি। আপনারাই (গণমাধ্যমকর্মী) ছিলেন কমপক্ষে ১৫০ এবং সেই দিন শুধু আমার নোমিনেশনই জমা দেয়ার দিন ছিল না, কাউন্সিলরদের নোমিনেশন জমা দেয়ার দিনও ছিল। যেই গেটটা ছিল, সেই গেটে আমি পাঁচজন নিয়ে ঢুকেছি। তাহলে কি ইসির অবস্থান ঠিক ছিল না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো সেইটি বলিনি।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আবারও বলছি- আমি আইন ভঙ্গ করিনি। জ্ঞাতসারে আমার দ্বারা কোনো আইন, নিয়ম, নীতি ভঙ্গ হয়নি। পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ব্যাখ্যায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত চমৎকারভাবে, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে উনি (আজমত উল্লা খান) দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আগামীর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভুল কিছুটা অজ্ঞতাবশত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের মতামত নিয়ে দুয়েকটি সভা হয়েছে সিটি এলাকার বাইরে। প্রাথমিকভাবে উনার বক্তব্যে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।

মনোনয়ন জমার সময় পাঁচজনের বেশি লোকের উপস্থিতিতে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে প্রার্থীর ব্যাখ্যা তুলে ধরে সিইসি জানান, মনোনয়নপত্র জমার দিন বেশ কিছুসংখ্যক কাউন্সিলরও তাদের দলবল নিয়ে এসেছিলেন শোডাউনের মতো করে। আমরা উনাকে শোকজ করেছি। উনি বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। কিন্তু উনার বক্তব্যটা বিবেচনা করছি। উনি লোকাল লিডার, উনি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা মনে করলে উনি লিখিতভাবে দেবেন। আমরা ফারদার কোনো তদন্ত করব না।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, উনার বক্তব্যে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের সাথে কো-অপারেট করে ভবিষ্যতে যাতে আচরণবিধি প্রতিপালিত হয়, সেটা সর্বোতভাবে চেষ্টা করবেন। ...আমরা শোডাউনকে বড় করে দেখেছি। উনি বলেছেন, যদি ভঙ্গ হয়ে থাকে উনি দুঃখিত।

সুইস টিপে বন্ধ করা যাবে না, শুভ সংস্কৃতির অপেক্ষায় সিইসি

আগামী আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাচনি সংস্কৃতি গড়ে উঠার আশা রেখে সিইসি বলেন, আমাদের যে নির্বাচনি সংস্কৃতি, কৃষ্টি বহু বছর ধরে গড়ে উঠেছে। সেখানে এ ধরনের উচ্ছ্বাস (মনোনয়নপত্র জমার সময় দলবল নিয়ে উপস্থিতি) প্রকাশ করে থাকে। এটাকে এক ধাক্কায় সুইচ টিপে বন্ধ করে দেয়া যাবে না। কিন্তু সেজন্য সহযোগিতা লাগবে। এজন্য এনফোর্স করার চেষ্টা করব, ধীরে ধীরে শুভ কালচার গড়ে উঠবে।

ইসির পদক্ষেপের বিষয়ে সিইসি জানান, এরই মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার করছি। আশা করি, এটা একটা সচেতনতা সৃষ্টি করবে। একটা এক্সাম্পল বাকিদের শিখতে সহায়তা করে। সামনে খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহীর ভোট রয়েছে।

খুলনায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশও দলের সহায়তায় রিটার্নিং অফিসার প্রতিহত করেছে বলে জানিয়ে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দল সহযোগিতা করছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটা ইতিবাচক। রাজনৈতিক নেতাদের রেসপন্স ইতিবাচক। ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।

এর আগে ৩০ এপ্রিল ও ৪ মে দুই দফায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে কেনো আজমত উল্লা খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে না ইসিতে এসে তার ব্যাখ্যা দিতে বলেছিল কমিশন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত