ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনিশ্চিত গন্তব্যের যাত্রী জাহাঙ্গীর

হাইকোটেও মেয়র পদে প্রার্থিতা বাতিল
অনিশ্চিত গন্তব্যের যাত্রী জাহাঙ্গীর

দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ার পর থেকে অনিশ্চিত গন্তব্যের যাত্রী হয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। প্রতিটি স্তরে তার মেয়র পদের প্রার্থিতা বাতিল হলো। সর্বশেষ হাইকোর্টেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে আজ প্রধামন্ত্রী দেশে আসার পর বড় ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফিদা এম কামাল ও এমকে রহমান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।

সূত্র জানায়, গত ৩০ এপ্রিল যাচাই-বাছাই শেষে ঋণখেলাপির অভিযোগে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন গাজীপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরের করা আপিল নামঞ্জুর করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম। ফলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসছে নির্বাচনে মেয়র পদে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিলে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। তবে আলোচিত এই নির্বাচনে মেয়র পদে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় ভোটের মাঠে এখনো রয়েছেন তিনি। গত ৭ মে মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া মেয়র পদপ্রার্থী ও করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় টিমের বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরা হয়। পরে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, মনোনয়নের দিন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিষয়ে কেউ দ্বিমত করেনি। এলাকার রাজনীতিতে এবং ভোটারদের কাছেও আজমত উল্লা খান জনপ্রিয়। সুতরাং দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ দেশে ফেরার পর এসব বিষয় তাকে অবহিত করা হবে।

এ বিষয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে আওয়ামী লীগ মাথা ঘামাচ্ছে না।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিটিংয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করতে চাই। কেউ যাতে আগুন-সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে গাজীপুরের নির্বাচন দেশবাসীর জন্য ও ক্ষমতাসীন দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, গাজীপুরের ভোটারসংখ্যা ১২ লাখের কাছাকাছি। ৯টি থানা, ৪৮০টি কেন্দ্র ও ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে একটা বিশাল এলাকা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে গেলে বিশাল কর্মীবাহিনী দরকার। তাই গাজীপুরে সর্বস্তরের জনগণ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষের সব মানুষকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই। ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা জয়লাভ করতে চাই। সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও আগুন-সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে কেউ যেন নির্বাচন বানচাল করতে না পারে সেজন্য কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম। তবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরপর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গাজীপুরের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত