ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে মান্নার আলাপ

আইনি সুযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন

আইনি সুযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন

দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস পর গত ঈদুল ফিতরের সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল দলের শীর্ষ নেতাদের। এ সময় ব্যক্তিগত খোঁজ-খবরের পাশাপাশি দেশ ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয় তাদের মধ্যে। এরপর সম্প্রতি হাসপাতালে অবস্থান ও বাসা থেকে যাওয়ার ফাঁকে অনানুষ্ঠানিক দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে বিএনপি মহাসচিবসহ দুয়েকজন নেতার।

এসব সাক্ষাৎকে অনেকটা স্বাভাবিকভাবে দেখা হলেও গত সোমবার রাতে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার আকস্মিক একান্ত সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তিতে থাকা খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ রাজনৈতিক নেতার সাক্ষাতের আইনি সুযোগ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ সাক্ষাৎকালে খালেদা জিয়া মান্নাকে আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য আসে।

ওই সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের মতে, শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারেন না। আর নির্বাচনের তো প্রশ্নই আসে না।

তিনি বলেন, শর্তের মধ্যে বলা আছে তিনি ঘরে থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং অন্য কোনো কিছু করতে পারবেন না। সুতরাং, তার রাজনীতি করতে পারারও কথা নয়।

খালেদা জিয়ার রাজনীতি ও নির্বাচনের লড়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় এলে মন্ত্রীরা এসব কথা বলেন।

এ বিষয়ে ওই সময় বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও দলটির নেতারা মনে করছেন, সরকারের এমপি-মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা নতুন ষড়যন্ত্র করছেন।

এদিকে গত সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচন, চলমান যুগপৎ আন্দোলন এবং খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আশ্বস্ত করেছেন খালেদা জিয়া।

গত সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে ফিরোজা থেকে বেরিয়ে যান মাহমুদুর রহমান মান্না। নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার এ তথ্য জানান। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক প্রথম নেতা হিসেবে খালেদার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন মান্না।

মাহমুদুর রহমান মান্নার বরাত দিয়ে সাকিব আনোয়ার বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বিএনপি কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। এই বিষয়টি খালেদা জিয়া আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, কেউ নির্বাচন গেলে যেতে পারে। তবে, আমি আপনাকে বলতে পারি, আমরা প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন যাব না।

তিনি বলেন, মান্না ভাই ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দেশের সফর নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান সাকিব।

‘খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই’- আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য তুলে ধরে বৈঠকে মান্না বলেন, আমি বিভিন্ন সমাবেশে বলেছি, এখন খালেদা জিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি সমাবেশে জাতির সামনে বক্তব্য রাখতে পারেন। তো আপনি (খালেদা জিয়া) কী রাজনীতিতে ফিরবেন?

অবশ্য মাহমুদুর রহমান মান্নার এই বক্তব্যে সরাসরি কোনো জবাব দেননি খালেদা জিয়া। তবে তিনি মাহমুদুর রহমান মান্নার উদ্দেশে বলেন, আপনি তো আছেন নেতৃত্ব দেয়ার মতো। আপনি ছাত্রজীবনে তো একাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের জবাবে তখন মান্না বলেন, আন্দোলন তো আপনাদের (বিএনপি) করতে হবে।

সূত্র মতে, এ সময় মান্নাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও সরকার পতনের জন্য চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ঢিমেতালে না এগিয়ে জোরেশোরে আন্দোলনে নামতে হবে।

এ সময় দেশের মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে যাতে দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় এমন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে বলেন খালেদা জিয়া।

সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে মান্না গণমাধ্যমকে জানান, বেগম খালেদা জিয়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। বর্তমান সরকারের আমলে জনগণের দুর্বিসহ জীবনযাপন নিয়ে বিচলিত ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই সাক্ষাতের আইনি সুযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান এ বিষয়ে নিজে কোনো মন্তব্য না করে আইনজীবীর মত নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই সাক্ষাৎ করেন বলে আলোকিত বাংলাদেশকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আইনি সুযোগ নিয়ে সরকার যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। কারণ, বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে ফের জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বাস্তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি বা অন্য নেতাদের অবাধ সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।

তবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমান অবস্থায় খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে আইনি কোনো বাধা-বিঘ্ন নেই- এটা সরকারের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে। তবে আসলে এটা সরকারের ছলচাতুরিতা, নতুন খেলা। কারণ, সরকার যেকোনো সময় তাকে পাকড়াও করতে পারে। তাই রাজনীতিতে নামলে খালেদাকে পাকড়াও করে তারা আন্দোলনকে শেষ করে দিতে চায়। তবে সরকারের এই শেষ চেষ্টা সফল হবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত