কোরবানি ঈদের আগেই মশলার দাম ঊর্ধ্বমুখী

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে অস্থির হয়ে উঠছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। পেঁয়াজসহ সব ধরনের মশলার দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী। ক্রেতারা মনে করছেন, মজুদ পর্যাপ্ত আছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহে ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের আড়ত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ রসুন আদা ছাড়াও সব ধরনের মশলার দাম ঊর্ধ্বমুখী। জিরা, ধনিয়া, এলাচ, গোলমরিচ, দারুচিনি এবং তেজপাতার দাম বেড়েছে বেশ। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মশলার দাম কেজিতে বেড়েছে ৮০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতাদের শঙ্কা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে না।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. ইলিয়াস জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছর মশলার দাম বাড়ে। সেই সঙ্গে পেঁয়াজের দামও বাড়ে। এবার কিছুটা আগেভাগেই দাম বেড়েছে। তার মতে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দাম বেড়েছে। আমদানিকারকদের অনেকে ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে বুকিং রেট বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিকবাজারে দামও বেড়েছে। এতে মশলার দাম বাড়ছে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম নিয়ন্ত্রণে বা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি জিরা ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন প্রতি কেজি জিরার দাম ৭৩০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে জিরার প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতি কেজি ধনিয়া এখন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে অন্তত ৫০ টাকা বেড়েছে। দারুচিনি প্রতি কেজি ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা। সরিষা ৩০০ থেকে ৩৫০, মেথি ১২০ থেকে ১৬০, আলু বোখারা ৪৮০ থেকে ৫০০, কিশমিশ ৪৪০ থেকে ৪৬০, কাঠবাদাম ৭৪০ থেকে ৭৬০, কাজু বাদাম ৮২০ থেকে ৯৫০, পেস্তা ২ হাজার ৬৬০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ এবং পাঁচফোড়ন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি বেড়েছে লবঙ্গ-এলাচের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি লবঙ্গে ৩০০ এবং এলাচে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ ২ হাজার ৬০০ এবং লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগেও প্রতি কেজি আদা ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। অন্যদিকে গত ১৫ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি। তাই বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ছাড়া অন্য কোনো পেঁয়াজ নেই। সপ্তাহখানেক আগেও পেঁয়াজ প্রতি কেজি ছিল ৪২ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের কোরবানির ঈদের সময় আদা ও রসুনের চাহিদা বেশি থাকে। আর এসব আদা রসুনের চাহিদার বড় অংশ পূরণ হয় চীন থেকে আমদানি করে। এক সপ্তাহের দুই পণ্য টনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছেছে। বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারকরাও বেকায়দায় পড়েছেন। দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে ভারত থেকে আমদানি স্বাভাবিক হলে পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমে আসবে। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতা মাসুদ আলম জানান, পেঁয়াজ নিয়ে সারা বছরই কারসাজি চলে। আর কোরবানির ঈদ এলে তো কথাই নেই। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এবারো পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ৪২ টাকা কেজি পেঁয়াজ এখন ৭৫ টাকা। জানি না সামনে আর কত দাম বাড়ে। প্রশাসন জোরদার নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করলে পেঁয়াজের দাম বাড়তেই থাকবে।