গাজীপুরে মতবিনিময় সভায় সিইসি

সবার সহযোগিতায় সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে বিশ্ব তাকিয়ে আছে। নির্বাচন অর্থহীন নয়, এর গুরুত্ব রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। আমরা কিন্তু তাদের মুখ বন্ধ করতে পারছি না। কেন না, পৃথিবীটা এখন উন্মুক্ত।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় গাজীপুর শহরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটরিয়ামে এই সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

সিইসি বলেন, আমাদের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান কথা বলছে। গাজীপুরসহ যে সব সিটিতে যে নির্বাচন হচ্ছে এটার গুরুত্ব কমিশনের কাছে অনেক। আগামীতে সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে এত বড় পরিসরের নির্বাচন জাতীয়ভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করবে। এজন্যই গাজীপুরে একটা মডেল নির্বাচন হোক আপনাদের সহযোগিতায়। এই নির্বাচনটা যেন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে যেন একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি।

কালো টাকা নিয়ে সিইসি বলেন, একজন কালো টাকা বিতরণ করলে আরেকজনকে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, যতদূর সম্ভব। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ এসে এমনটা রাতারাতি করতে পারে, এটা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তবে এই কালো সংস্কৃতি থেকে আমাদের ধীরে ধীরে উঠে অসতে হবে। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় এখনও অনেক কালো সংস্কৃতি রয়ে গেছে। আপনাদের চেষ্টায় হয়তো একটা সময় সুশৃঙ্খল, অহিংসভাবে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমাদের আন্তরিকতা ও চেষ্টার অভাব থাকবে না। আমরা পুরোপুরি সেই চেষ্টাটাই করব। কিন্তু আপনাদেরকেও স্ব স্ব অবস্থানে থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে চেষ্টা করতে হবে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা লেমিনেটেড পোস্টারের কথা বলেছেন। সারা বিশ্বে ক্লাইমেট ক্রাইসিস ওভারকাম করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ সব দেশকে নিতে হচ্ছে। সে দিকে লক্ষ্য রেখে পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কিছু না করা আমাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশন আমরা এককভাবে তেমন কিছু করতে পারব না যদি প্রশাসন, পুলিশ তাদের দায়িত্ব শক্ত ও পেশাদারভাবে না করে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা যেহেতু মেট্রোপলিটন এরিয়া এখানে কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্ব জেনারেল ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ যেটা আছে তার চেয়ে বেশি। কিছু ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আমার মনে হয় পুলিশ কমিশনারকে ও কর্মকর্তাদের দেয়া আছে। কাজেই পুলিশ কমিশনার সাহেব আপনাকে সেই দায়িত্ব যোগ্যতা, আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করতে হবে।

উৎসবমুখর নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর হতে হবে। আপনাদের মধ্যেও একটা সমঝোতা থাকতে হবে। আপনাদের মধ্যে একটি বোঝাপড়া থাকতে হবে। আমরা কেউ সহিংসতা করব না। উচ্ছৃঙ্খলতা করব না। ভোটাররা দ্বিধান্বিত, ভীত হবেন- এমন কোনো আচরণ করবেন না। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেব, আমাদের তরফ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, যাতে ভোটাররা নিরাপদে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। আপনারা যেমন আমাদের সহায়তা চাইছেন, আমরাও আপনাদের সহায়তা চাই। এটা কিন্তু পারস্পরিক।

সরকার নিয়ে সিইসি বলেন, আমরা যখন সরকার বলি, তখন আওয়ামী লীগকে মিন (বোঝাই) করি না। সরকার হচ্ছে রাষ্ট্র। আমরা সরকার বলি, বিভাগীয় কমিশনার, ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার, পুলিশ কমিশনারসহ তাদেরকে। তাদের কিন্তু নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্বাচন কমিশন যে সহায়তা চাইবে, তা দিতে এই সরকার বাধ্য এবং তারা আমাদের সেই সহায়তা দেবে। আমাদের পক্ষ থেকে যদি বিচ্যুতি হয়, সরকারের পক্ষ থেকে যদি বিচ্যুতি হয়, আমরা যদি সে অভিযোগ পেয়ে থাকি, সেই অভিযোগ আমরা আমলে নেব এবং আমাদের সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে প্রতিকারের যে বিধান রয়েছে, তা করব।

তিনি বলেন, ইভিএমে বিলম্ব হলেও ভোটাররা ভোট দিতে পেরেছে। ইভিএমের অনেক ইতিবাচক দিকে রয়েছে। রংপুরে মেকানিক্যাল প্রবলেম হয়েছিল। প্রার্থীরা ইভিএম নিয়ে ডেমনস্ট্রেশন করলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ইভিএমের উপস্থিতি সঠিক উপস্থিতি। কালো টাকা ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে না। কেউ কালো টাকা দিলে ভোটের সময় সেই ব্যক্তি কাছে দাঁড়িয়ে থাকবে না। কালো টাকা ইচ্ছা করে নিলে বা কেউ জোর করে পকেটে ঢুকিয়ে দিলেও ভোটটা আপনি সঠিক জায়গায় পছন্দের লোককেই দেবেন। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কোনোরকম অনিয়ম দুর্নীতি আমরা বরাদশত করব না।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএফএম কামরুল হাসান ও রিটার্নিং অফিসারের স্টাফ অফিসার এএসএম জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কশিশনার মো. আলমগীর। উপস্থিত ছিলেন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন লরছেন। এসব প্রার্থীরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছে সিটি কপোরেশনে। এ সিটিতে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭৮ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯৭টি ভোটকক্ষ থাকবে। মোট ভোটারসংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬, তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন এবং মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন। এ নির্বাচনে ৪৮০ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৩ হাজার ৪৯৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ৬ হাজার ৯৯৪ জন পোলিং কর্মকর্তাসহ ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা থাকবেন।