নতুন কারিকুলাম

অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন নিয়ে অন্ধকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

নতুন কারিকুলাম সংশ্লিষ্ট তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন হবে আগামী মাসে। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে অন্যান্য শ্রেণির অর্ধবার্ষিক এবং নির্বাচনি পরীক্ষা। গতানুগতিক পরীক্ষা নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন না থাকলেও নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী মূল্যায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো অন্ধকারে আছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে কোনো নির্দেশনা না এলেও একেক স্কুল একেকরকমভাবে নিজেদের মতো করে মূল্যায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। আর এই সুযোগে কোচিং-প্রাইভেট কার্যক্রম চাঙা হয়ে উঠছে। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন-সংক্রান্ত বিস্তারিত গাইডলাইন এনসিটিবি থেকে পাওয়ার সাথে সাথে বিদ্যালয়গুলোতে প্রেরণ করা হবে।

আর এনসিটিবি জানিয়েছে, অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নের বিস্তারিত গাইডলাইন তারা প্রস্তুত করে রেখেছে। তবে কৌশলগত কারণে মূল্যায়ন পর্ব শুরুর কিছুদিন আগে তথা এ মাসের ২৩/২৪ তারিখ থেকে রুটিনসহ বিস্তারিত গাইডলাইন পাঠানো হবে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের কোন কারণ নেই বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে চলমান এসএসসি পরীক্ষার কারণে অনেক স্কুলে কেন্দ্র থাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্ধবার্ষিক ও নির্বাচনি পরীক্ষার সময় আগের চেয়ে এক সপ্তাহ পেছানোর ঘোষণা দিয়েছে মাউশি।

গত বুধবার অর্ধবার্ষিক ও প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন প্রসঙ্গে মাউশির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৩ সালের অর্ধবার্ষিক ও প্রাক নির্বাচনি পরীক্ষার সময়সূচি ১ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী যেসব বিদ্যালয়ে পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ে ৩১ মে পযর্ন্ত শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ অনুযায়ী অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতার মূল্যায়ন প্রচলিত পেপার-পেন্সিল পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভব নয়। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষার্থী মূল্যায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রকল্পভিত্তিক কাজ, অনুসন্ধানমূলক কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে মূল্যায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত গাইডলাইন এনসিটিবি থেকে পাওয়ার সাথে সাথে বিদ্যালয়গুলোতে প্রেরণ করা হবে। অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষার্থী মূল্যয়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী পাঁচ কর্মদিবস প্রস্তুতিমূলক শ্রেণি কার্যক্রম ও ১০টি বিষয়ের জন্য ১০ কর্মদিবস অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন।

তৎপ্রেক্ষিতে অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুতিমূলক শ্রেণি কার্যক্রম ও অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন/পরীক্ষা/প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষা নতুন সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

নতুন সূচি অনুযায়ী ৩১ মে থেকে ৬ জুন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুতিমূলক শ্রেণি কার্যক্রম এবং অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির জন্য স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। আর ৭ থেকে ২২ জুন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন/ পরীক্ষা/ প্রাক নির্বাচনি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে মাউশির এ সিদ্ধান্তের আগেই বিভিন্ন স্কুলে অর্ধবার্ষিক/নির্বাচনি পরীক্ষা এবং মূল্যায়নের রুটিন দিয়ে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতিও নিয়েছে। তবে এখন সেই রুটিন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে হবে। এতে শিক্ষকদের বাড়তি হয়রানির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক জানান, তাদের স্কুলে ১ জুন থেকে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়নের রুটিন দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়নের নিজেদের মতো করে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রশ্নও জমা নেয়া হয়েছে। এতে ৪০ শতাংশ সামস্টিক মূল্যায়নের জন্য ভাইবা, অ্যাসাইনমেন্ট, লিখিত পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া ৬০ শতাংশ হবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। তবে পরে এসব সিদ্ধান্তেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। সামনে আরো পরিবর্তন যে হবে না, তা বলা যাচ্ছে না। এতে শিক্ষকদের হয়রানি করা হচ্ছে। এছাড়া অনেক কিছু অজানার কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তমের ক্লাসে গিয়েও শিক্ষকদের বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে কুষ্টিয়ার একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক জানান, রমজানের ছুটি ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের কারণে দুই মাসের মতো একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। এতে নতুন কারিকুলামের সিলেবাসের অর্ধেকও শেষ হয়নি। এ অবস্থায় জুনে মূল্যায়ন হবে। তবে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষকরা এখনো অনেকটা অন্ধকারে আছে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান গতকাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কোনো স্কুল নিজেদের মতো পরীক্ষার রুটিন করলেও ষষ্ঠ ও সপ্তমে তা পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ীই পরীক্ষা ও মূল্যায়ন হবে। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী মূল্যায়নের জন্য খুব স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কৌশলগত কারণে এটা আগে থেকে প্রকাশ করা হচ্ছে না। কারণ নির্দেশিকা প্রকাশ করলেও তা ভিডিও করে প্রচারসহ নানা তৎপরতা শুরু হয়ে যাবে। তাই আগামী ২৩/২৪ তারিখের পর এসব নির্দেশিকা স্কুলগুলোতে পাঠানো হবে। এতে রুটিনসহ বিস্তারিত গাইডলাইন থাকবে। তাই এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

নতুন কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের প্রজেক্ট ও হোক ওয়ার্ক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ প্রস্তুত করে দিতে বিভিন্ন কোচিং-প্রাইভেট চাঙা হওয়ার প্রসঙ্গে প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, এসব তৎপরতাও বন্ধ হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা যখন দেখবে যে, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়নে কোনো নম্বর নেই, এতে কোনো প্রতিযোগিতাও নেই, তখন আর কোচিং-প্রাইভেটের পেছনে দৌঁড়াবে না। অনেক দিনের রুটি-রুজির এ সিস্টেম বন্ধ হতে একটু সময় লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।