ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে মোচা

* কক্সবাজারে ৫৭৬ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত * খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে মোচা

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় থাকা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় মোচায় পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় কূলে ফিরেছে গভীর সমুদ্রে থাকা মাছ ধরার ট্রলারগুলো।

গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, আগামী রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোচা। তবে এর অগ্রভাগ আগের দিন অর্থাৎ শনিবার রাতেই বাংলাদেশের উপকূল স্পর্শ করবে। মোচার ফলে ভারি বৃষ্টি হবে উপকূলে এবং অন্যান্য স্থানেও। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে বাংলাদেশেরও যথেষ্ট ঝুঁকি আছে।

ঘূর্ণিঝড় মোচার অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, দেশের চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়। এর আগে এসব বন্দরে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল।

আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি এখন উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকমুখী। এ অবস্থায় থাকবে আজ সকাল পর্যন্ত। এরপর শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে মোড় নেবে। এভাবে মোড় নেয়ায় এটি প্রবল এবং পরবর্তী সময়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে এটি রূপান্তরিত হবে। এরপর কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূলের কাছে গিয়ে কিছুটা দুর্বল হবে।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে এটি ঠিক কখন আঘাত হানবে। অনেক সময় গতি কমে যায়। কোথায় কখন ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হয়তো আরও পরে বলা যাবে। তবে এখন কিছু বিষয় অনুমান করছি আমরা।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকের ভাষ্য, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ প্রবেশ করবে। ঘূর্ণিঝড়টির অর্ধেক অংশ বাংলাদেশের ওপরে বাকিটা মিয়ানমারের উপকূলে থাকতে পারে।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র মিয়ানমারের সিত্তুই ও কায়েকফু এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে আপাতত মনে হচ্ছে। তবে আমরা এতে ঝুঁকিমুক্ত নই। ঘূর্ণিঝড়ের অর্ধেক যেহেতু আমাদের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অংশ দিয়ে যাবে, সেই অংশটায় ব্যাপক বৃষ্টি হবে। ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হবে।’

গত বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছিলেন, মোচা সুপার সাইক্লোন হতে পারে। সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে সেটি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৭ হলে তাকে বলা হয় তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আর বাতাস যদি ১১৭ থেকে ২২০ কিলোমিটার বেগে বয়, তবে তা হয় অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আর ২২০ কিলোমিটারের ওপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘মোচার সুপার সাইক্লোন হিসেবে আসার আশঙ্কা দেখছি না। সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটারের মতো বাতাসের গতিবেগ হতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার আর সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫০ হতে পারে। মোচার অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হওয়ার ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি।’

গতকাল এমভি আব্দুল্লাহ ট্রলারের মাঝি মো. নয়া বলেন, ‘চার দিন আগে সাগরে গিয়েছিলাম। গতকাল (বুধবার) বিকাল থেকে হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হবে সংবাদ পেয়ে আমরা তীরের দিকে ফিরতে শুরু করি। আজ (শুক্রবার) সকালে তীরে পৌঁছেছি। আরও অনেক ট্রলার রয়েছে যারা আসছে।’ আলীপুর বন্দরের সাত ভাই ফিশের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে গতকাল সকাল থেকে একশ’র বেশি ট্রলার বন্দরে পৌঁছেছে। এখনো অনেক ট্রলার আসা বাকি আছে। সেগুলো রওয়ানা দিয়েছে।’

আলীপুর-কুয়াকাটা আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘যে ট্রলারগুলো এসেছে সেগুলো পাথরঘাটা, চরদোয়ানী, তুষখালী, পিরোজপুরসহ বেশ কয়েক স্থানের। আবহাওয়া খারাপ হলে নিকটবর্তী স্থানে তারা চলে আসে। তবে যারা এখন তীরে আসেনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের দ্রুত তীরে ফিরে আসতে বলা হচ্ছে।’

পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোচা বর্তমানে পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজকে সকাল পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তী সময়ে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

শেল্টার প্রস্তুত : ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’য় পরিণত হয়েছে। আগামী রোববার আছড়ে পড়তে পারে কক্সবাজার উপকূলে। সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৭৬ সাইক্লোন শেল্টার।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোচা মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বৈঠক করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত