ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় নির্বাচনে জাপার প্রার্থী বাছাই

রওশনপন্থিরা সক্রিয় নীরব জিএম কাদের

রওশনপন্থিরা সক্রিয় নীরব জিএম কাদের

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবারও আলোচনায় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে মাইনাস করে ফের দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করতে তৎপর রওশন এরশাদ। দেবর-ভাবিকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা গুঞ্জন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার নেতৃত্বে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি, তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সূত্র জানায়, জাপার প্রধান রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিরোধী দলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী মামুনূর রশীদকে প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য কেন্দ্রীয় প্রধান করে আট বিভাগকে সমন্বয় করে গঠন করা হয়েছে সাতটি বিভাগীয় সাংগঠনিক সমন্বয় কমিটি।

রওশনপন্থি নেতারা জানান, দলের অন্তত ২০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে বাদ দেয়া, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে পৃথক জোটে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে জিএম কাদেরের পরিকল্পনা ও এরশাদপুত্র সাদকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে না রাখাই হলো বিরোধের মূল কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে রওশন এরশাদ এসব বিষয় সমাধানে জিএম কাদেরকে লিখিত চিঠি ও তার সঙ্গে সরাসরি কথা বললেও দল থেকে বহিষ্কৃতদের ফেরাতে নারাজ তিনি। সেই সঙ্গে জাপার মূল নেতৃত্ব সাদের কাছে তুলে দিতেও সম্মত নন।

সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে গাটছড়া বাঁধতে আগ্রহী জিএম কাদের। আওয়ামী লীগ বিষয়টি টের পেয়ে রওশনের সহযোগিতা চান। কিন্তু রওশনের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেননি দেবর জিএম কাদের। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক সমঝোতা বৈঠকে কিছুটা উত্তেজনার পারদ নামলেও ফের বেড়েছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলেছে, আগামী জুনের মধ্যে জাপার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কোনো রকম সমঝোতা না হলে জিএম কাদেরকে মাইনাস করে সম্মেলন করবেন রওশন। তবে তাকে দল থেকে বাদ দেয়া হবে না। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ দেয়া হতে পারে তাকে।

জাপার উভয়পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীর্ষ নেতৃত্বে বিরোধের কারণে পার্টির সংসদ সদস্যরাও দোটানায় রয়েছেন। তারা রওশন ও জিএম কাদের উভয়ের মন রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত রওশন এককভাবে সম্মেলন করলে বেকায়দায় পড়তে পারেন জিএম কাদের।

রওশনের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেছেন, দলীয় নেতাকর্মীরা চাইলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক এবং দলের বিশেষ প্রয়োজনের তাগিদে কাউন্সিল বা বিশেষ কাউন্সিল আহ্বান করতে পারেন রওশন এরশাদ। তাকে গত কাউন্সিলেই এই ক্ষমতা কাউন্সিলারই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। কেন না, তিনি জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পাশে থেকে দলের সুদিনে দুর্দিনে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, রওশন এরশাদের সম্মেলনে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের উপস্থিত থাকবেন। দলের সব নেতাকর্মী কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় পার্টি কারো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়, নেতাকর্মীরাই দলের প্রাণ। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মসীহ বলেন, রওশন এরশাদ উপলব্ধি করেছেন, যারা এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে ছিল, যারা বছরের পর বছর দলীয় কর্মকাণ্ডে ছিল অথচ তাদের দলে যথাযথ মূল্যায়ন নেই। তাদের কথা বিবেচনা করে ও নতুন নেতৃত্ব বিকশিত করার জন্য এই কাউন্সিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কাউন্সিলের তারিখ ঠিক করার কথা জানান তিনি।

এদিকে জিএম কাদের বলেন, নির্বাচনের সময় আমরা জনগণের প্রত্যাশা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। কী করলে জনগণের ভালো হবে, আমরা সেই দিক বিবেচনা করেই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নেব। যদি মনে করি নিজেরাই এককভাবে নির্বাচন করতে পারব, তাহলে আমরা তাই করব। যদি আমাদের সেই শক্তি না থাকে, তাহলে আমরা অন্য সিদ্ধান্ত নেব। তখন আমরা দেখব কার সঙ্গে গেলে জনগণ বেশি উপকৃত হবে, সেই দিকে আমরা লক্ষ্য রাখব। এ ব্যাপারে দলের নেতাকর্মী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রওশনের কাউন্সিল প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দশম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে সারাদেশে জাপা শক্তিশালী করতে মাঠে নেমেছে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বিভাগীয় সাংগঠনিক সমন্বয় কমিটি। আগামী ১৮ মে থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সমন্বয় কমিটির জেলা-উপজেলা সফর। আর শেষ হবে ১৫ জুনের মধ্যে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ সাংগঠনিক সমন্বয় কমিটির প্রথম সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কমিটির সমন্বয়ক গোলাম সারোয়ার মিলন। সৌদি আরব থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। সভাপতির বক্তব্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আগামী দিনেও রওশন এরশাদ রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টি ৯৬ থেকে গণতন্ত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে যে ভূমিকা রেখেছে, তা ভুলে গেলে চলবে না। মনে রাখতে হবে জাতীয় পার্টির সমর্থনেই বার বার ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঢাকা বিভাগে পার্টিকে উজ্জীবিত করে আগামী নির্বাচনে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান জানান দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন গোলাম সারোয়ার মিলন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত