ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আইওসি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের আহ্বান

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের আহ্বান

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুই দিনব্যাপী ষষ্ঠ ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন (আইওসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। এবারের এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, অংশীদারিত্ব এবং সমৃদ্ধি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং যথাযথ হয়েছে। টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে অংশীদারিত্ব, শান্তি ও সমৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ মহামারি এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যার প্রেক্ষাপটে আজকের এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য আরো বেশি প্রাসঙ্গিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি এবং সার সঙ্কটের ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেও জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশীদারিত্ব এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর জোর দিতে হবে। কোভিড-পরবর্তী সময় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ‘International Year of Dialogue as a Guarantee of Peace, ২০২৩’ শীর্ষক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে দেয়া ভাষণের ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি যা বাংলাদেশের মূল পররাষ্ট্রনীতি-রেজ্যুলেশনের ১৪তম অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত হয়েছে। সেখানে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, নিরক্ষরতা এবং বেকারত্বের নিরসনে কাজ করার গুরুত্ব অনুধাবন করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যগুলো অর্জনের জন্য গঠনমূলক সহযোগিতা, সংলাপ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার চেতনায় ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো প্রতি বৈরিতা নয়’- প্রতিপাদ্যের উপর জোর দেয়া হয়েছে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রচেষ্টায়ও জাতির পিতার উপর্যুক্ত উক্তিটি একইভাবে প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উদ্ধৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এই অঞ্চলে শাস্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে যৌথ লক্ষ্য অর্জনের জন্য অর্থপূর্ণ সহযোগিতা, সংলাপ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ায় আমাদের কার্যকর ‘অংশীদারিত্ব’ প্রয়োজন।

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বলেছিলেন, ‘মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি অত্যন্ত জরুরি এবং তা সমগ্র বিশ্বের নর-নারীর গভীর আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটাবে’। ওই ভাষণে তিনি ভারত মহাসাগরকে শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উপরে বিশেষভাবে জোর দেন। বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’-এ ভূষিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির একনিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ছয়টি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বিষয় হলো, প্রথম: মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহকে তাদের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমুদ্র কূটনীতি জোরালো করতে হবে। দ্বিতীয়: এই অঞ্চলের অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তদসংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তৃতীয়: একটি স্থিতিশীল এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমীহের ভিত্তিতে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থ: ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যার মধ্যে সমুদ্রে জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নৌ ও বিমান চলাচল নিশ্চিত করা হবে। পঞ্চম: শান্তির সংস্কৃতি চর্চা এবং জনবান্ধর উন্নয়নের প্রসার করতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ, সমতাভিত্তিক এবং অন্তভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী সম্প্রদায়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। ষষ্ঠ: উন্মুক্ত, নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রসার করা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলে এবং তার বাইরেও সমতাভিত্তিক টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ষষ্ঠ সম্মেলন ঢাকায় আয়োজন করায় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি ভারত সরকার এবং ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই সম্মেলন অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করার এবং মত বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্মেলনে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজ সিং রুপান জি. সি. এস. কে, মালদ্বীপের উপ-রাষ্ট্রপতি ফয়সাল নাসিম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, শ্রীলঙ্কার বন্দর, নৌ ও বিমানমন্ত্রী নিমল সিরিপালা ডি সিলভা, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রী থারাকা বালাসুরিয়াসহ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিসহ প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সম্মেলনে আগত অতিথিদের সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রথম সিঙ্গাপুরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা, ২০১৮ সালে ভিয়েতনাম, ২০১৯ সালে মালদ্বীপ, ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পঞ্চম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এক বছর বিরতি দিয়ে যষ্ঠ সম্মেলনটি ঢাকায় হতে যাচ্ছে। গত ছয় বছরে এই সম্মেলন শান্তি, নিরাপত্তা, সহযোগিতা, সমুদ্র অংশীদারিত্ব, কৌশলগত, ভূ-রাজনীতিসহ নানা ইস্যুতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের (আইওআর) দেশগুলোর শীর্ষ পরামর্শমূলক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত