যোগাযোগ খাতে প্রথম অনন্য অর্জন

বিশ্বমানের আইকনিক রেল স্টেশন অনেকটা দৃশ্যমান

প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

কক্সবাজারে দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের ডুলাহাজারা-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণকাজও ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে দেশের প্রথম বিশ্বমানের অত্যাধুনিক ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেলস্টেশন। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এই রেলস্টেশনটি এখন অনেকটা দৃশ্যমান। এখন চলছে সৌন্দর্য্য বর্ধনসহ অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা। সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে বিশ্বমানের সব ব্যবস্থা থাকছে এই স্টেশনটিতে। আর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের অসাধারণ অর্জন বলে মনে করছেন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।

কক্সবাজারের ঝিংলজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়াস্থ নির্মাণাধীন ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এই রেলস্টেশন ভবনের মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ। এখন চলছে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা। পাখির চোখে ধরা পড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। বড় আকৃতির ক্রেন, নির্মাণসামগ্রীর ভারি যানবাহন ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় বলে দিবে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ।

এই আইকনিক স্টেশনের স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ জানান, দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না এই স্টেশনে। ওপরের ছাদ খোলা থাকায় থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। এর আধুনিক নির্মাণ শৈলীর কারণেই বক্সবাজার রেলস্টেশনকে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন।

স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘কক্সবাজার রেলস্টেশন ডিজাইন করার সময় একটা অনুপ্রেরণা নিই। ঝিনুক ও শামুকের গঠনটা বাহিরে থাকে, আর বাকি শরীরের অংশটুকু ভেতরে আবৃত থাকে। আমরা সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পুরো রেলস্টেশনটাকে একটা ছাউনি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি।

মো. ফয়েজ উল্লাহ আরো বলেন, ‘এখন রেলস্টেশন শুধু যাত্রী যাওয়া-আসার জন্য নয়। এখানে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে টেকসই করার জন্য নানা ধরনের ব্যবহারকে সংমিশ্রণ করা হয়। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা, রেস্টুরেন্ট, ফুডকোর্ট, মাল্টিপারপাস হল, হোটেল থাকবে। সুতরাং এটি শুধু রেলস্টেশন নয়; এটি একটা ডেস্টিনেশন। এটা একটা আকর্ষণীয় আর্থসামাজিক মডেল।

স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘চারিদিকে গ্লাস লাগানো হচ্ছে। এখানে কোনো কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন নেই। এছাড়া ছাউনিটা পুরো কাঠামোটাকে ঢেকে রেখেছে। ফলে সবসময় ভবনটি সহনীয় তাপমাত্রায় থাকবে। এতে কুলিং লোড কম হবে। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের লোডও কম হবে। এতে এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই প্রকল্পটি পরিবেশগতভাবে টেকসই হিসেবে ডিজাইন করা। এখানে বৃষ্টির পানি থেকে শুরু করে পানি পুনর্ব্যবহার করা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থকাবে। এছাড়া পুনর্ব্যবহৃত টেকসই উপাদান ব্যবহার করছি। পানির জন্য কম অপচয় ওয়াটার ফিক্সচার ব্যবহার করছি। নানা রকম সুযোগ-সুবিধা আছে এখানে। বলা যায়, এই বিল্ডিংটা একটা পরিপূর্ণ গ্রিন বিল্ডিং।’

প্রকল্প কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘স্টেশন ভবনের থাকছে বিশাল আকৃতির ঝিনুক। ঝিনুকের পেটে মুক্তার দানা। তার চারপাশে পড়ছে স্বচ্ছ জলরাশি। এর মধ্যেই আসবে ট্রেন। ঝকঝকে আধুনিক এই স্টেশন অনেকটা উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের মতো। আর মূল আকর্ষণ ঝিনুকের ফোয়ার দৃশ্যমান হবে আগামী একমাসের মধ্যে।’

আইকনিক স্টেশন ভবনের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার তাইজুল ইসলাম বলেন, আইকনিক স্টেশনের মূল আকর্ষণ হচ্ছে ঝিনুকের ফোয়ারা। এরই মধ্যে এই ফোয়ারের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে ঝিনুকের ফোয়ারের কাজ শেষ হবে। আইকনিক স্টেশন ঘুরে আরও দেখা যায়, আইকনিক রেলস্টেশনের কাজ শেষের পথে, যার ছোঁয়া অনেকটা দৃশ্যমান। আগামী সেপ্টেম্বরে বিশ্বমানের আইকনিক রেলস্টেশনটি চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

আইকনিক স্টেশন বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আব্দুল জাবের মিলন বলেন, যে কেউ আইকনিক স্টেশনে আসলে কাজটি যে শেষের পথে যার ছোঁয়া দেখতে পাবে। এই স্টেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং

ঝুঁকিপূর্ণ স্টিল ক্যানোফি বসানোর যে কাজটি ছিল তা শেষ হয়েছে। এখন ছাদের কাজ চলমান রয়েছে। ফিনিশিং, টাইলস, গ্লাস লাগানো, চলন্ত সিঁড়িসহ সব কাজই আমাদের টার্গেট অনুযায়ী এগিয়ে নিয়েছি। আশা করি, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইকনিক স্টেশনটি কার্য উপযোগী করে তোলা হবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাতে ট্রেন চলাচল করতে পারে সেই জন্যই আইকনিক স্টেশনটি তৈরি করা হচ্ছে।

দোহাজারি-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্প (লট-২) এর মহাব্যবস্থাপক মো. আহমেদ সুফি বলেন, বিদেশিরাও যদি রাতের বেলায় ঢাকা থেকে ট্রেনে

উঠে সকালে কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনে পৌঁছে সারাদিন সৈকতে

ঘুরে আবার তারা ফিরে যেতে পারবেন এই সুবিধা থাকছে। বিশেষ করে, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অনন্য স্থাপত্যশৈলী এই আইকনিক স্টেশন করা হচ্ছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এ কারণে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী পারি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে। ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ হবে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়াও পুরো রেলপথে নির্মিত হবে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। আর চেম্বার অফ কর্মাস বলছে, আইকনিক রেলস্টেশন যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের অসাধারণ একটি অর্জন। কক্সবাজার চেম্বার অফ কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, উন্নত বিশ্বে গিয়ে যে সুযোগ-সুবিধা রেল স্টেশনে পাওয়া যায় তার সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে ভ্রমণ পিপাসুরা পাবে। তাই এই ধরণের স্থাপত্যশৈলী কক্সবাজারে নির্মাণ করা যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের একটি অসাধারণ অর্জন। যা কক্সবাজারের পর্যটন খাতকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। ২৯ একর জমির উপর ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের আইকনিক স্টেশন ভবন। আর স্টেশন ভবনের পশ্চিম পাশে একসঙ্গে নির্মিত হয়েছে ৫তলা ২০টি ভবন।