ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

কাল উপকূলে আঘাত হানতে পারে মোখা

কাল উপকূলে আঘাত হানতে পারে মোখা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

মোখা গতিমুখ পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। আগামীকাল রোববার দুপুরের দিকে এটি কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে যেতে পারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রে বাতাসে সর্বোচ্চ গতিবেগ বাড়ছে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় উপকূলবাসী : ঘূর্ণিঝড় মোখায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। তবে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল সকাল থেকেই রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপি ও কোস্ট গার্ডের দলগুলো মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালায়। উপকূলের বাসিন্দারা জানান, ঝড়ে তারা নিজেদের রক্ষা করলেও বসতঘর, ফসলি জমি, গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তারা কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্পর্কে উপকূলবাসী জানলেও রয়েছেন ভয়ের মধ্যে। উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের দাবি উঁচু বাঁধের। মোখার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে উপকূল ও নদীতে সচেতনতামূলক প্রচারণা করছে রেড ক্রিসেন্ট ও কোস্ট গার্ড।

মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখতে ডিসি-ইউএনওদের নির্দেশ : ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ঝড়ের কারণে যদি কোথাও বিদ্যুৎ চলে যায় এবং মোবাইল ফোনের সংযোগ যদি না থাকে, তবে তারা যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের কাজগুলো করে যান, সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গতকাল দুপুরে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে ২২ জেলার ডিসি ও ইউএনওরা অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান।

তিনি জানান, বেশকিছু বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে- ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় তারা যেন তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। এনজিওসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করে প্রস্তুতি নিতে হবে। শুকনো খাবার, দিয়াশলাই ও মোমবাতি প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধারকারী বোট, ট্রলার ও গাড়িগুলো এমনভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে তা যেকোনো সময় কাজে লাগানো যায়। চালকদের মোবাইল ফোন নম্বরসহ সবকিছু হাতের কাছে রাখতে বলা হয়েছে।

মাহমুদুল হোসাইন বলেন, বিদ্যুৎ যদি চলেও যায়, কোনো কারণে যদি মোবাইল ফোনের সংযোগ না-ও থাকে, তারা যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের কাজগুলো করে যান, সেভাবেই তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হতেই পারে যে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল, সেক্ষেত্রে যেন হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশেনার অপেক্ষায় না থাকতে হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তাদের টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখবেন এবং যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন।

যেসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইবে না, তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এই সচিব বলেন, প্রথমে তাদের নিয়ে আসার জন্য মোটিভেশন (উৎসাহিত) করতে বলা হয়েছে। তাতে যদি সফল না হয়, তাহলে জোর করে হলেও তাদের নিয়ে আসতে হবে। কারণ, মানুষের ক্ষতি হোক; তা আমরা কখনোই চাইব না। জোর করে হলেও তাদের কাছাকাছি আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় নিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বয়স্ক, শিশু ও নারীদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাদের অবশ্যই সম্মানজনকভাবে রাখতে বলে দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, খাবার পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট পর্যাপ্ত পরিমাণে দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সব জায়গায় চলে গেছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রীসহ মেডিক্যাল টিমও প্রস্তুত আছে। ঝড় মোকাবিলায় ডিসি ও ইউএনওদের প্রস্তুতির কথাও আমরা শুনেছি। সেই মোতাবেক তাদের সতর্ক থাকতে বলেছি। শুধু প্রস্তুতি নিলেই হবে না, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রী, স্থানীয় এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত