প্রকৌশলীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

দেশের উন্নয়নের ধারা সমুন্নত রাখুন

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৌশলীদের দেশের উন্নয়নের মূল শক্তি হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশের বিদ্যমান উন্নয়নের ধারা সমুন্নত রাখতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং আপনাদের (প্রকৌশলী) কাছে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল আইইবি প্রাঙ্গণে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬০তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান। দেশের জনগণের উন্নয়নে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (প্রকৌশলী) দেশের উন্নয়নের মূল শক্তি।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বে থাকায় বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন, সবাই আন্তরিক থাকবেন ‘যাতে আমরা উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারি।’ ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা ‘ডেল্টা প্লান-২১০০’ বাস্তবায়ন করবে যাতে দেশের কেউ আর ভোগান্তির শিকার না হয় এবং এতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম একটি সম্মানজনক ও উন্নত জীবন পাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনারা (প্রকৌশলীরা) বিষয়টি মনে রেখে কাজ করবেন।’ তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, তার সরকার কখনোই কোনো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে না। তিনি বলেন, ‘আমরা অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করি না।’ সরকার প্রধান বলেন, যে বিষয়টির ওপর তিনি সর্বদা জোর দেন তা হলো কোন পরিকল্পনা দেশের জনগণের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা বয়ে আনবে এবং সরকার তা থেকে আয় করতে সক্ষম হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘মেগা প্রকল্প নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু প্রকল্পগুলো শেষ হলেই এর সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করছে।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, যারা এসব মেগা প্রকল্পের সমালোচনা করেন, তারা কী বলতে চান।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে প্রকল্পই নিই না কেন, প্রথমেই আমরা ভাবি দেশের মানুষ কতটা উপকৃত হবে। আর সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কী রিটার্ন হবে এবং কত দ্রুত সেটা আসবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কখনোই কোনো দেশ বা কোনো সংস্থার দেয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেন না যা দেশ ও জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের (প্রকৌশলীদের) অবহিত করতে চাই এবং আমি এটা কখনোই মেনে নেব না। কারণ, আমি সেটাই করব, যা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা রাজধানীকেন্দ্রিক নয়। আমরা গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত উন্নয়ন করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বিদুৎ সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হওয়ায় গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে অভিবাসনের প্রবণতা কমেছে।

সারা দেশে শতাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বিচারে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা শিল্পায়নের জন্য বিশেষ অঞ্চল সৃষ্টি করেছি- যেখানে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমাদের আবাদি জমিকে রক্ষা করতে হবে।’ তিনি দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও কৃষি খাতে দীর্ঘ সময় ধরে ভর্তুকি দেয়া অব্যাহত না রাখার বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে হবে। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’

আইইবি’র সভাপতি প্রকৌশলী মো. নজরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন (শিবলু)। অনুষ্ঠানে আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোল্লা মো. আব্দুল হোসেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনারারি সেক্রেটারি প্রকৌশলী কাজী খাইরুল বাশার অনুষ্ঠানে যোগদানকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ওপর গানসহ একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী, কেন্দ্র, উপকেন্দ্র, প্রকৌশল বিভাগ ও এএমআরই বিভাগের স্নাতকদের হাতে পুরস্কার (স্বর্ণপদক) ও সনদপত্র তুলে দেন।