ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ বিশ্ব মা দিবস

জন্মদাতাকে কষ্ট দেব না- এই হোক সন্তানের প্রত্যয়

জন্মদাতাকে কষ্ট দেব না- এই হোক সন্তানের প্রত্যয়

আজ বিশ্ব মা দিবস। আজ মা ও তার সন্তানের জন্য অত্যন্ত প্রিয় একটি দিন। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক ‘মা’। এই ছোট্ট একটি শব্দের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে গভীর স্নেহ, মমতা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা। মা ও সন্তান এই দুইজনের সম্পর্কের পরিসর কেবল রক্তের সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর ব্যাপ্তি অজীবনের। এক অজানা মধুর সম্পর্কের বন্ধনে মা ও সন্তানের সম্পর্ক আবদ্ধ। কারো থেকে কাউকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা সম্ভব নয়। অথচ আমাদের সমাজে অনেক সন্তান রয়েছেন, তারা তাদের মায়ের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেননা। মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে এক মিনিট কথা বলারও প্রয়োজন বোধ করেন না। মায়ের আর্থিক প্রয়োজনটাও সাধ্যমতো পূরণ করেননা। অনেক মা আছেন, যারা তার সন্তান তার ওপর মানসিক নিপীড়ন নির্যাতন চালালেও মুখ ফুটে কাউকে কিছু জানান না। সমাজে সন্তানের মান সম্মানের বিষয়টি একজন মা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেন। সন্তান তার কোন প্রয়োজন না মেটালেও তার কোন অনুযোগ কিংবা অভিযোগ থাকে না। সন্তানের কল্যাান কামনা করে জীবন পার করেন মা। শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি সন্ধিক্ষণে সন্তানের পাশে এসে দাড়ান মমতাময়ী মা। ঘুমের মধ্যেও সন্তানের মুখখানি স্মরণ করে মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। কেবল শৈশবেই নয় একজন সন্তান প্রাপ্ত বয়স হওয়ার পরও তার মা ওই সব খাবার খেতে অনিহা প্রকাশ করেন যা তার সন্তান ছোট বেলায় খেতে পছন্দ করত। সন্তানের সামান্য পছন্দ মায়ের কাছে অনেক বড় বিষয়। আর সেই বিষয়টি মনে করে সন্তান বড় হওয়ার পরও প্রতিনিয়ত মায়ের আকাঙ্ক্ষা জাগে আহারে! আমার ছেলে কিংবা মেয়েকে যদি তার পছন্দের খাবারটি খাওয়াতে পারতাম। বৃদ্ধ বয়সে চলাফেরা করার শক্তি হারানোর পরও একজন মা চিন্তা করেন কীভাবে তার সন্তানের মুখে হাসি ফোটানো যায়। তার পছন্দের খাবার তৈরি করা যায়। স্থায়ী সম্পদ বিসর্জন তো দূরের কথা নিজের স্বর্ণাংলাকার বিক্রি করে হলেও মা তার সন্তানকে মানুষ করার অপ্রাণ চেষ্টা করেন। অনেক নারী অল্প বয়সে স্বামী হারানোর পরও কেবল সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে আজীবন সন্তানকে আগলে রেখে বাকী জীবন কাটিয়ে দেন। অথচ আমাদের সমাজের অনেক সন্তান আছে যারা তাদের মায়ের প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসেন না। অনেক ক্ষেত্রে সন্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাকে ভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত করেন। প্রতিষ্ঠানিক জ্ঞান কম অথচ বৈষয়িক জ্ঞানের ভান্ডার মাকে নিয়ে অনেক সন্তান ‘অস্বস্থির’ মধ্যে থাকেন। তথা কথিত ‘স্ট্যাটার্স’ রক্ষা করতে গিয়ে এই রাজধানীতে অনেক সন্তান আছেন, যারা মাকে তুচ্ছ তাচ্ছ্বিল্যের সঙ্গে লালন পালন করেন। বাসায় কোনো মেহমান এলে মাকে ভিন্ন কক্ষে অবস্থান করতে বাধ্য করেন। অনেক সন্তান রয়েছেন যারা তাদের জীবনের ‘ভালোমন্দ’ কোনো খবর মায়ের সঙ্গে শেয়ার করেন না। কেউ কেউ আছেন যারা স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে মাকে দূরে নির্বাসনে পাঠান। অন্য কোন ভাইবোনের আশ্রয়ে মায়ের বাকি জীবনটা অতিবাহিত করার জন্য তুলে দেন। এজন্য হয়তো মাসে কিছু টাকাও দেন। অথচ একজন মায়ের কাছে অর্থ-বিত্তের চেয়ে সন্তানের সান্নিধ্য অনেক বেশি কাম্য। তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। মায়ের সুখ শান্তি ও মায়ের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি তার স্বাচ্ছন্নময় জীবন নিশ্চিত করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেন অনেক সন্তান। মা তো মা-ই, তার কোনো তুলনা হয় না। তাকে কারো সঙ্গে তুলনা করা যায়না। সন্তান শিশু বয়সে যেমন অসহায় থাকে আমাদের সমাজের মায়েরা তেমনি তার বার্ধক্যে এসে অসহায় বোধ করেন। তিনি খাদ্য, বাসস্থান কিংবা চিকিৎসার জন্য সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তাই মা দিবসে প্রতিটি সন্তানের প্রত্যয় হোক মাকে কোনো কষ্ট দেব না। মমতাময়ী মায়ের সম্মানে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘বিশ্ব মা দিবস’ পালন করা হয়। তাই আজ বিশ্ব মা দিবস। ভ্রুণ থেকে দশটি মাস গর্ভে ধারণ করে যে মা তার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, সেই মায়ের সম্মানে তার প্রতি আজ শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করবে তার সন্তানরা। তবে এটাও ঠিক যে মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। প্রতিটি দিনই হোক সন্তানের জন্য মা দিবস। প্রাচীন গ্রিসে বিশ্ব মা দিবস পালন করা হলেও আধুনিককালে এর প্রবর্তন করেন এক মার্কিন নারী। ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিস নামের নারী মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।

১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। নানা আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মা দিবস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত