সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রধানমন্ত্রী

শুকরিয়া : মোখার আঘাত থেকে রক্ষা পেল দেশ

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শাহিনুর রহমান

মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা। তিনি তার অপার কৃপায় বাংলাদেশকে ঘূর্ণিঝড় মোখার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছেন। আবহাওয়া অফিস থেকে গতকাল দুপুরের পর জানানো হয় বাংলাদেশে মোখার ঝুঁকি কমে এসেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান মিয়ানমারের সিতুই অঞ্চলে দিয়ে ঝড়টি উপকূলে উঠে যাবে। ফলে কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় যে ঝুঁকিটা ছিল, সেটি অনেকটাই কমে এসেছে। এ খবরে কয়েক দিনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার অবসান ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যম ঘূর্ণিঝড় উপদ্রত এলাকার মানুষের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ কথা বলতে থাকেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রবণ নয় এমন এলাকার মানুষ পরস্পরের সঙ্গে ঝড়ের খবর শেয়ার করেন। তাদের সবারই প্রথম অভিব্যক্তি ছিল ‘যাক আল্লাহ এই যাত্রায় আমাদের রক্ষা করেছেন।’ সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মোখা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এই ঝড়ের ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ঊৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল। ঝড়ের গতিবিধি নিয়ে মানুষ সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আসছে। আমরা ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রেখেছি ও ঝড়টি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’ ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানি জমে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সেই সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কার্যক্রম বন্ধ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় সাময়িক দুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। তার এই নির্দেশনা ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী।

ঘূর্ণিঝড় মোখার সার্বিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি মনিটরিং করেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সকালে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। মোখা বাংলাদেশে আঘাত হানেনি। এটা স্বস্থির খরব। তবে আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কা থাকে, তা মাথায় রেখেই সতর্কমূলক ও প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ নেয়াই বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমানের কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজটিই গত কয়েক দিন ধরে করে আসছিলেন। একটি জনবান্ধব সরকারই জনগণের সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবেন এবং তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান। এই দেশের মালিক জনগণ এবং তাদের সেবা করার সুযোগ সরকার কাজে লাগাবে- এটাই জনগণের কাম্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ও বনায়নের মতো মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনগণকে আশ্রয় দেয়ার জন্য ‘মুজিব কেল্লা’ নির্মাণ করেন। মানুষকে সহায়তা করার জন্য রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে তোলেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথকে আরো সম্প্রসারিত করেন। সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিশে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী যেন দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, সেই ছক আওয়ামী লীগ সরকার করে রেখেছে। তাই নিদের্শনা পাওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট অংশীজন তাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। কেবল একটি নির্দেশনার অপেক্ষা। বাংলাদেশের মানুষ যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশ সেটা রাজনৈতিক অপতৎপরতা হোক কিংবা করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি হোক অথবা দেশবিরোধী যে কোনো যড়যন্ত্র হোক তা মোকাবিলা করে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও শক্তি এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্জন করেছে। সেটার পথপ্রদর্শক হচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে একজন ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। আর সে কারণে অন্যরা বিচলিত হলেও প্রধানমন্ত্রী অটল ও অবিচল থেকে নির্দেশনা দেন। আর সে কারণেই এ দেশের মানুষ অনেকটা সংকট, দুর্বিপাক ও কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এই দেশে ইতোপূর্বে অনেক মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানায় মানুষ, প্রাণী ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ঘূর্ণিঝড় কী এবং কীভাবে কখন তা উপকূলে আঘাত হানবে- সে সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় কিংবা দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে তেমন কোনো প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হতো না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য বিভিন্ন যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই খাতে বিগত সরকারের তুলনায় বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক একটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দুর্যোগ মোকবিলায় বাংলাদেশে সক্ষমতা ইতোমধ্যে বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মডেল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার কার্যকর ও সময়োপযোগী কৌশল নির্ধারণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকার এবং সরকারপ্রধানের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কেন না, সরকার প্রধানের নির্দেশনায় প্রশাসন পরিচালিত হয় এবং তারা সরকার প্রধানের নির্দেশনা অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসীম ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ক্ষণে ক্ষণে নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও ঘূর্ণিঝড়ের সময় নির্ঘূম রাত কাটিয়ে পরিস্থিতি অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। উপজেলা পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার মতো সাহস ও শক্তি অর্জন করা সহজ হয়েছে। প্রশাসনে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার মধ্যদিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার যে প্রচেষ্টা সেটা ঘূর্ণিঝড় মোখা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া এবং দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষ ও বিভিন্ন পর্যটন এলাকা থেকে পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে মাইকিং এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজটি অত্যন্ত সুচারুরূপে সম্পন্ন করা হয়।