ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনিশ্চয়তায় ইভিএমের ভবিষ্যৎ

ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ল প্রকল্পের
অনিশ্চয়তায় ইভিএমের ভবিষ্যৎ

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যাবহার হচ্ছে না। আপাতত দৃষ্টিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যে এই যন্ত্র ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকছে। তবে আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কি না, এ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে সাংবিধানিক প্রাতিষ্ঠানটি। সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছেনা, তবে বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। অথচ ইসি সাম্প্রতি জানিয়েছে আগামীতে ইউপি ভোট ব্যালটে হবে, ইভিএমে হচ্ছে না ইউপি নির্বাচন। এ কারণে ইভিএম ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ব্যয় বাড়বে না।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ব্যয় বাড়ানো হবে না। যেকোনো সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, যেহেতু আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাই প্রচার-প্রচারণা, প্রশিক্ষণ, যাতায়াতসহ বিভিন্ন ধরণের ব্যয় বাবদ অনেক খরচ কমে যাচ্ছে, যার কারণে এই প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে না। জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। বর্তমানে ৪০ হাজার ইভিএম ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অবশিষ্টগুলোও কম-বেশি মেরামত করতে হবে। এগুলো মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল ইসি। তবে সরকার সে প্রস্তাব নাকোচ করে দেয়। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএম ভোট গ্রহণ করে তৎকালীন নূরুল হুদা কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে সোচ্ছার ছিল। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক ‘সংলাপের’ পাশাপাশি প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গেও বৈঠক করেছিল কমিশন। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ৯টি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ইসির সংলাপ বর্জন করে ইভিএমের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরে। পরে গত বছরের ২৩ আগস্ট বর্তমান সিইসি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। তিনি তখন আরো জানিয়েছিলেন, কমিশনের হাতে বর্তমানে যে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে, তা দিয়ে বড়জোর ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট গ্রহণ করা যাবে। ফলে নতুন করে ইভিএম কিনতে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প নিয়ে সেটিকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় কমিশন। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কথা বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়নি। এরপরই নিজেদের কাছে থাকা দেড় লাখ ইভিএমে অর্ধশতাধিক আসনে ভোট করার কথা জানায় কমিশন। ইভিএমের পক্ষে ইতিবাচক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বক্তব্যও দিয়ে আসছিল কমিশন। কিন্তু ইসির হাতে থাকা অধিকাংশ ইভিএম নষ্ট। মেশিনের ভেতের পানি-কাদা জমে আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সিকিউরড কানেকটিং কেবল ও পাওয়ার কেবল নেই। তাড়াহুড়ো করে কেএম হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম কিনলেওসেগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা তারা করেনি। ফলে সেসব ইভিএম সচল করতে চরম বেগ পেতে হয় বর্তমান কমিশনকে। ইভিএম মেরামতে ১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার প্রস্তাব দেয় ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেছেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনে ইভিএমে ভোট করছি ইভিএমে। আগামীতে পৌরসভা ভোট ইভিএমে হবে। তবে ইউপি ভোট আমরা ব্যলটে করব। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে তফসিল দেওয়া হবে। তবে একেকটির একেক সময় নির্বাচন হবে। এর মধ্যে পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন রয়েছে। পৌরসভা আছে সাতটা, ইউপি অনেকগুলো; যার কারণে তফসিল ঘোষণার আগে বলা যাবে না কতগুলো। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত