সময়মতো পাঠ্যবই সরবরাহে ব্যর্থতার অভিযোগ

তিন প্রেসকে অযোগ্য ঘোষণা, পাঁচটিকে সতর্ক

যথাসময়ে বই সরবরাহে কঠোর অবস্থানে এনসিটিবি

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহে ব্যর্থতার অভিযোগে চিহ্নিত ১৮টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের (প্রেস) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এর মধ্যে তিনটি প্রেসকে ১ বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা এবং ১৫টি প্রেসকে সতর্ক নোটিশ দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে শতভাগ পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতে না পারায় সরকারের একটি সফল কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করছে এনসিটিবি। একই সঙ্গে আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ছাপা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য এবারের দরপত্র প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট কাজে কঠোর অবস্থান নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম গতকাল সোমবার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এ বছর যথাসময়ে পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে ব্যর্থতার অভিযোগে এ পর্যন্ত তিনটি প্রেসকে ১ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত তথা দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা এবং ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে নোটিশ দেয়া হয়েছে। ১ বছরের পারফরমেন্স দেখে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র মতে, ২০১০ সালের পর থেকে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। করোনা মহামারির কারণে গত ২ বছর উৎসব ছাড়াই বিকল্প ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়। তবে এ বছর উৎসবের সঙ্গেই সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বই বিতরণ করা হয়। যদিও নানা জটিলতার কারণে বই ছাপা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো সব বই দেয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে নানা সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, আকস্মিকভাবে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ নানা কারণে এসব বই ছাপার কাজ বিঘ্নিত হয় বলে সে সময় প্রেস কর্তৃপক্ষ ও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

এজন্য কাগজের মান ও নির্ধারিত সময়ের পরও বই সরবরাহে বেশ ছাড় দিয়েছিল সরকার। তবে এরপরও বই সরবরাহে অস্বাভাবিক দেরি হওয়ায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছে দিতে বছরের প্রায় দুই মাস লেগে যায়। এতে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস কার্যক্রমেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বই সরবরাহে ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে এনসিটিবি।

সূত্র মতে, যথাসময়ে বই সরবরাহে ব্যর্থতার অভিযোগে গত ৯ মে এনসিটিবির সচিব মোসা. নাজমা আখতার স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ১ বছরের জন্য দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা এবং ১৫টি প্রেস কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুরের মেরাজ প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স নামের প্রতিষ্ঠানকে দেয়া নোটিশে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়া একটি রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে শতভাগ পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতে না পারায় সরকারের একটি সফল কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পাদিত চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, বর্ণিত বিষয়ে দরপত্র নির্দেশিকার জিসিসি ৪২.৪ (বি) শর্ত অনুযায়ী এনসিটিবি’র ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের দরপত্রে অংশগ্রহণে এক বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হলো। একই ধরনের রাজধানীর মাতুয়াইলের জাহানারা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সকেও অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া সতর্ক করে দেয়া একটি প্রতিষ্ঠানের নোটিশে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া একটি রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে শতভাগ পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতে না পারায় সরকারের একটি সফল কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পাদিত চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে।

এমতাবস্থায়, ভবিষ্যতে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী যথাযথভাবে কার্যসম্পাদনের বিষয়ে অঙ্গীকার প্রদান করার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে সর্তক করা হলো। প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কার্য সম্পাদনের বিষয়ে অঙ্গীকার প্রদানের জন্য পত্র প্রাপ্তির ৫ কর্মদিবসের মধ্যে নির্দেশ প্রদান করা হয়।

এ ধরনের নোটিশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- ডেমরার মানামা প্রিন্টার্স, কেরানীগঞ্জের আল-আমিন প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, সূত্রাপুরের অনিন্দ্য প্রিন্টিং প্রেস, মাতুয়াইলের সমতা প্রেস, বাংলাবাজারের আনমন নিউ অফসেট প্রেস, বগুড়ার মা সিস্টেম কম্পিউটার প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজিং, ডেমরার ভাই ভাই প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, সূত্রাপুরের রাব্বিল প্রিন্টিং অ্যান্ড প্রেস এবং বাংলাবাজারের ভয়েজার পাবলিকেশন্সের নাম জানা গেছে।