রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের শোক

নন্দিত নায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এমপি ফারুক আর নেই

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকাই চলচ্চিত্রের নন্দিত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী) আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক আর নেই। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রক্তে সংক্রমণজনিত জটিলতা নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফারুক। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ মার্চ নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর যান তিনি। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা সেরে তার মৃতদেহ আজ দেশের আনার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমার তার অভিষেক হয়। প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন চিত্রনায়িকা কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৬ সালে ভূষিত হয়েছেন আজীবন সম্মাননায়।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘সারেং বৌ’, ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘মিয়া ভাই’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’ ইত্যাদি। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে অভিনয় করেন বহু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে খ্যাতি পান। অভিনয় থেকে অবসর নেয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

রাষ্ট্রপতির শোক : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

গতকাল এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যু দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি বলেন, তার অভিনীত চলচ্চিত্র দেশের সমাজ ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার অবদান দেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

রাষ্ট্রপ্রধান মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকশন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরেণ্য চিত্রনায়ক, সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি এক শোক বার্তায় বলেন, এই বিশিষ্ট অভিনেতা তাঁর কর্মের মধ্যদিয়ে এদেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

স্পিকারের শোক

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ সদস্য নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোক বার্তায় স্পিকার তার রুহের মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আকবর হোসেন পাঠান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে আরো শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা, ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও ঢাকা-১৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনএফ প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রমুখ।

শোকবার্তায় নেতারা বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যাদের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, আকবর হোসেন পাঠান ফারুক তাদের অন্যতম।

তারা বলেন, চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তার অভিনীত চলচ্চিত্র দেশের সমাজ ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাংস্কৃতিক জগতে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।