ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় নির্বাচনে আমলাতান্ত্রিক সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে : সিইসি

জাতীয় নির্বাচনে আমলাতান্ত্রিক সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমলাতান্ত্রিক সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ মাঠের বিষয়ে আপনাদের (সাংবাদিকদের) কিছু বলব না।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি। সিইসি বলেন, আমাদের তরফ থেকে সব দলকে আহ্বান থাকবে। আমরা চাই আপনারা সবাই নির্বাচনে আসুন এবং নির্বাচনটাকে অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর করে তুলুন। আমাদের যে দায়িত্ব সেটা কোনো দলের দিকে তাকানো নয়। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ পারেন। সেই চেষ্টাটাই আমরা মূলত করব। এক্ষেত্রে কিন্তু নির্বাচনকালীন যে রাজনৈতিক সরকার এবং যে আমলাতান্ত্রিক সরকার থাকবে; আমলাতান্ত্রিক সরকার বলতে মিন করছি মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যন্ত এবং রাজনৈতিক সরকার বলতে উপমন্ত্রী থেকে উপর পর্যন্ত, দুটি মিলেই কিন্তু পরিপূর্ণ সরকার। আমরা রাজনৈতিক সরকার ও আমলাতিন্ত্রক সরকারে ওপর আমাদের যে নিয়ন্ত্রণ আইনে আমাদের ওপর প্রদত্ত হয়েছে, সেটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, নির্বাচনে আমাদের সকলকে সহায়তা করতে হবে। সরকারের সদিচ্ছার কথা বলেছি। বঙ্গবীর আমাদের বলেছেন যে, আমরা কিছুটা দুর্বল কি না, আমরা বলেছি- সরকারের সদিচ্ছ অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রাজনৈতিক সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে কিন্তু অনেকটা, দীর্ঘদিনের যে আমলাতান্ত্রিক সরকার অথাৎ ডিসি, এসপি, বিজিবি। আমরা বারবার একটা অভিযোগ শুনেছি যে, পুলিশের একটা ভূমিকা থাকে নেতিবাচক। এটা পুলিশের জন্য নয়, স্থানীয়ভাবেই হয়তো পুলিশকে পক্ষাশ্রীত করার চেষ্টা হয়ে থাকে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকে, শক্তি থাকে, ইউনিফর্ম থাকে, সেই দিকটাও আমরা দেখব। আমি পুলিশকে দোষারোপ করছি না। আমিই পুলিশের কাছে যাচ্ছি কনভিন্স করার জন্য, পুলিশ আমার কাছে আসছে, এই বিষয়টাই কিন্তু আমাদের সবার নিউট্রলাইজ করতে হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, জাতীয় নির্বাচনে মিডিয়ার একটা রোল থাকবে, যে অনিয়ম তা যদি দৃশ্যমানভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, তাহলে সেটা নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ভূমিকা নিতে সহায়ক হবে। নিরপেক্ষা মাঠ কি করব, সেটা আমরা নিজেরা চিন্তা করব। আপনাদের কাছে বলতে চাচ্ছি না।

দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভাঙা যাবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যে নির্বাচনগুলো করেছি, এতে মোটামুটি তুলনামূলকভাবে সুশৃঙ্খলাভাবে হয়েছে। আমি বলব না যে অ্যাবস্যুলিটলি হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিন্ত আমরা সরকার, পুলিশ এবং প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা কখনো অসহযোগিতা পাইনি। আশাকরি জাতীয় নির্বাচনেও তারা এই ভূমিকার পালন করে যাবেন। যাতে জনগণের আস্থা, আপনাদের ওপর সম্মানবোধ, আপনাদের ওপর, আমাদের ওপর, সরকারের ওপরও প্রতিষ্ঠা পায়।

আরেক সিইসি বলেন, সরকারের সদিচ্ছ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না একথা আমরা বলিনি। সরকারের সদিচ্ছা এবং সহযোগিতা না থাকে এবং তার যে অঙ্গ সংগঠনগুলো পুলিশ ও প্রশাসন সহায়তা না করে তাহলে যে, সক্ষমতা আছে তা সীমিত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে পুলিশ, আর্মি, বিজিবি, ওরা যদি আমাদের নিরপেক্ষভাবে সহায়তা করে। যদি কোনোরকম অন্য কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত না হয়, তাহলে আমার শক্তিটা অনেক বেড়ে যাবে। সেখানে আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি, আমাদের দায়িত্ব যতকুটু সম্ভব সাধ্য অনুযায়ী পালন করার চেষ্টা করবো। আবার এটাও বলেছি, যে হ্যাঁ, নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাচন আয়োজনের একটা বড় দায়িত্ব আছে। একই সঙ্গে আপনারাও যারা দল আছেন, নেতারা আছেন, কর্মীরা আছেন, তাদেরও দায়িত্ব আছে সার্বিকভাবে নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া। খুব প্রতিকূল পরিবেশ যদি বিরাজ করে, তাহলে আমাদের জন্য অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে।

বৈঠক শেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর হলে তার দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আমরা ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি।

বঙ্গবীর বলেন, কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনে আমি এবার নিয়ে দুইবার এসেছি। আগেরবারের চেয়ে এবার অনেক ভালো লেগেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা পুরো নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসে আমি আশ্বস্ত হয়েছি। তারা বলেছেন, তাদের সাধ্যমতো সুষ্ঠু, নিরেপেক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশে বাসাইল নির্বাচন উপহার দেবেন।

তিনি বলেন, ইসির অনেক কথার সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করেছি। নির্বাচন হওয়া উচিত অবাধ, নিরপেক্ষ। কোন দল অংশগ্রহণ করল, ক’টি দল অংশগ্রহণ করল, এটার চেয়ে আমি মনে করি কতগুলো ভোটার তার ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারল- এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। এই কথাতে ইসি যে প্রতিশ্রুতি আমাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে কথা দিয়েছেন। আমি আশাকরি সেই কথা মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনি পদ্ধতি আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

এখন পর্যন্ত ইসির কার্যক্রমে ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অবস্থা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই কমিশন যখন গঠিত হয় তখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানে আমারা গিয়েছিলাম। আমাদেরও কমিশন গঠনে প্রস্তাব ছিল। এই নির্বাচন কমিশন প্রথম প্রথম অনেক এলোমেলো কথাবার্তা বলেছে। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারা বুঝতে পেরেছেন নির্বাচন কমিশন কী এবং তাদের অনেক এলোমেলো কথা কমে গেছে। সেজন্যই আমরা উৎসাহী হয়ে এসেছি। আমাদের বাসাইল নির্বাচনে যদি দেখা যায়, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, কিছু ভুলত্রুটি তো থাকতেই পারে, ১০০টি ভুল হতো আগে যেখানে, এখন যদি ৮০টা অতিক্রম করতে পারে, তাহলে বলব যে উন্নতি হয়েছে। যতদিন এ নির্বাচন কমিশন থাকবে, প্রতিমুহূর্তে তাকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ফেল করলে তার আর কোনো দায় নেই বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।

সুষ্ঠু ভোটের দায়িত্ব কি কেবল নির্বাচন কমিশনের- এমন প্রশ্নে কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, না না না না, একটা নির্বাচনকে যথাযথ সুন্দর করার প্রধান দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তার চাইতেও আমার কাছে মনে হয়, যারা রাজনৈতিক দল, জনসাধারণ, ভোটার এবং সরকার; তফসিল ঘোষণার পরে সরকারেরও সরকার হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। অনেকে তার সেই ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব দেখাতে পারে অনেকে আবার পারে না। আমার বিশ্বাস, এই কমিশন এখন সেই নেতৃত্ব দেখাতে পারবে।

দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় কমিশনে দলীয় সরকার বলে কিছু থাকবে না। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন হলো সরকার, সরকার কিছু নয়। সরকার হলো তখন আজ্ঞাবহ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা অতটা দেখা যায় না। আমরা প্রত্যাশা করব ধীরে ধীরে পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদীত হবে, পশ্চিমে অস্ত যাওয়ার আগেই আমরা এই পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারব। নির্বাচনের সময় কোনো দলীয় সরকার থাকে না। নির্বাচনি সরকার, তার কোনো কাজ নেই। অসম্ভব বলে কিছু নেই। নির্বাচন কমিশনেরও এগিয়ে আসতে হবে এবং মানুষকেও একটু এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনে আগ্রহ সৃষ্টি করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভূমিকা রাখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত