ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ওলামা লীগের সম্মেলন কাল

চাঙা বিতর্কিত ব্যক্তিরা ত্যাগীরা ব্যাকফুটে

চাঙা বিতর্কিত ব্যক্তিরা ত্যাগীরা ব্যাকফুটে

দীর্ঘ ২৯ বছর পরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের প্রথম সম্মেলন। আগামীকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সংগঠনটির প্রথম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওলামা লীগের সম্মেলন ঘিরে চাঙা হয়ে উঠেছে বিতর্কিত ব্যক্তিরা। ওলামা লীগ না করা আলেমরাও শীর্ষ নেতৃত্ব পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিতর্কিতদের চাপে ব্যাকফুটে রয়েছে ওলামা লীগের ত্যাগী নেতারা। ওলামা লীগ না করা বিত্তশালী আলেমদের কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে ত্যাগীদের সংগঠন থেকে দূরে রাখারও চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, ওলামা লীগের জাতীয় সম্মেলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার ঘোষণায় হেফাজত-জামায়াতপন্থি, দলবদলকারী, মুসলিম নিকাহ্ রেজিস্ট্রার সমিতির নেতা, হজের টাকা আত্মসাৎকারী মামলায় অভিযুক্ত এমন কি ওলামা লীগ নাম শুনে নাক ছিটকানো আলেমরাও এখন ওলামা লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। প্রার্থীদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. কেএম আব্দুল মমিন সিরাজী। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের নির্দেশেই তিনি জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ওলামা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন প্রায় ৩১ জন আলেম। এদের অনেকে জেলা থেকে ঢাকায় এসেই নিজে নিজে কেন্দ্রীয় ওলামা লীগের নেতা হয়ে গেছেন। আবার ওলামা লীগের শীর্ষ পদপ্রার্থীদের অনেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় ইসলামি মহাজোটেও যোগ দিয়েছিল।

সভাপতি প্রার্থী মাওলানা আসাদুজ্জামান আসাদ দলের দুঃসময়ে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মরহুম ইলিয়াস বিন হেলালীর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মূল্যায়ন না পেয়ে মাওলানা আসাদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদের নেতৃত্বে ইসলামি মহাজোটে যোগ দেন। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে পুনরায় ওলামা লীগে ফিরে আসেন তিনি। এখন সভাপতি প্রার্থী। এ বিষয় জানতে চাইলে মাওলানা আসাদুজ্জামান আসাদকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রামে ওলামা লীগের রাজনীতি করা হাফেজ মাওলানা আলতাফ হোসাইন মোল্লাও রাজনৈতিক দল খুলে ইসলামি মহাজোটে যোগ দেন। ওলামা লীগের সম্মেলনের আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদিশা এরশাদের সঙ্গে ছিলেন। এখন ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলতাফ হোসাইন মোল্লা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমি দলের দুঃসময়ে চট্টগ্রামে ওলামা লীগ করেছি। ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ছিন্ন এমন ঘোষণা আসার পর আমি এরশাদের জোটে যোগ দিই। আমি তো জামায়াত কিংবা হেফাজত নই। এরশাদ আওয়ামী লীগের মহাজোটে আছে। আমি আগেও ওলামা লীগ করেছি, এখনও ওলামা লীগ করছি। মুসলিম নিকাহ্ রেজিস্ট্রার সমিতির মহাসচিব হাফেজ সাগর আহমেদ শাহীনও ওলামী লীগের শীর্ষ পদ পেতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। সাবেক ছাত্রলীগের এ নেতা ওলামা লীগের নাম শুনলে এক সময় নাক ছিটকাতেন।

ওলামা লীগের বাইরেও একাধিক সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে ওলামা লীগের শীর্ষপদ প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ীর বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ওলামা লীগের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার আমি যুক্ত ছিলাম। কখনো ওলামা লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। এছাড়া আওয়ামী লীগের ধর্মমন্ত্রী মরহুম শেখ আব্দুল্লাহর সঙ্গে আমি আওয়ামী লীগের ধর্ম সেলে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছি।

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করা হাফেজ মাওলানা সুলাইমানও ওলামা লীগের সভাপতি। কিশোরগঞ্জ জেলায় বাড়ি হওয়ায় সদ্য বিদায়ি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছের লোক বলে সর্বত্র পরিচয় দেন তিনি। এবিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একসময় কিশোরগঞ্জ জেলায় ওলামা লীগ করেছি। ২০১৪ সালে ঢাকায় এসেও জাতীয়ভাবে ওলামা লীগকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। সদ্য বিদায়ি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের লোক আমি। সেখানে রাজনীতি করা খুবই কঠিন।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন ওলামা লীগের নেতারা। নেতারা বলেন, জাতীয় সম্মেলনের আগে প্রতিটি বিভাগে ওলামা লীগের সম্মেলন করা হয়েছে। সংগঠনের মর্যাদা রক্ষায় ওলামা লীগের সব পক্ষই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবে।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. কেএম আবদুল মোমেন সিরাজিও কখনো ওলামা লীগ করেনি বলে দাবি করেছেন ওলামা লীগের একটি অংশ। তবে এবিষয়ে তিনি বলেন, আমি ওলামা লীগ করেছি এবিষয়ে অনেক তথ্য প্রমাণ রয়েছে। অনেকে ওলামা লীগ করেছেন আমার চোখে ধরা পরেনি। আবার আমি ওলামা লীগ করেছি হয়ত তার চোখে ধরা পরেনি।

ওলামা লীগের নেতাকর্মীরা দাবি, সংগঠনের মধ্য থেকে ত্যাগী ও ওলামা লীগ করা লোকদের দিয়েই কমিটি করা হোক। কোনো বহিরাগত লোককে ওলামা লীগের নেতা না করলেই খুুশি হব। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ওলামা লীগের মধ্যে থেকে যাকে দায়িত্ব দিবেন আমরা সংগঠনের স্বার্থে তাদের মেনে নেব। তবে জামায়াত ও হেফাজতপন্থিদের যাতে ওলামা লীগে জায়গা দেয়া না হয়।

এছাড়াও ওলামা লীগের শীর্ষপদে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, মুফতি মিজানুর রহমান মিজানী, আহাদ আলী সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেন বোখারী, মাওলানা আব্দুল আলিম আজাদী, মুফতী শেখ মোঃ শহিদুল ইসলাম, মুফতী কামাল উদ্দিন, হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা ফরিদ উজ্জামান, মাওলানা আবু ইউসুফ, হাফেজ মাওলানা মো. আনোয়ার হোসাইন জুয়েল, মুফতী মাওলানা মো. শাইখ আলমগীর হোসাইন, মো. দেলুয়ার হোসেন, মাওলানা সোলাইমান নোমানী, মাওলা কাজী ওলি উল্লাহ,। মাওলানা রবিউল আলম সিদ্দিকী, মাওলানা আইনুল হক, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল ইসরাফিল, মাওলানা কাজী আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, হাফেজ মাওলানা শামসুল আলম জাহাঙ্গীর নূরানী হুজুর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত