সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ

পাঁচ সিটির অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে ইসি

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পাঁচ সিটি ভোটে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসিকে আশ্বস্ত করেছে, তারা ভোট সুষ্ঠু করতে ইসির নির্দেশনা মেনে চলবে। এসব সিটিতে কেমন ভোট হয় সেটির অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ ভোট করার প্রস্তুতি রয়েছে ইসির। ভোটে সব রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণ করানোরা জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসি। পাঁচ সিটি ভোট সুষ্ঠু করে দেশ-বিদেশে ও রাজনৈতিক দলের আস্থা আর্জন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। ইসির প্রতি আস্থা ফেরাতে সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাঁচ সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীসহ সব প্রার্থী এবং তাদের লোকজনকে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের জন্য একাধিক বার নোটিশ করেছে ইসি এবং প্রার্থীদের জবাবদিহিতায় এনেছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলের দাবি মেনে ব্যালটে সংসদ ভোট করছে ইসি। তফসিলের পর ইসির হাতে ক্ষমতা থকবে। ভোট সুষ্ঠু করতে যা করার আছে, ইসি তা করতে সক্ষম। এ মেসেজ পাঁচ সিটি ভোটের মাধ্যমে দিয়ে আস্থা ফিরাতে চায় ইসি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং এমনকি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মাঠপর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ। গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে হাবিবুল আউয়াল কমিশন সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। আসন্ন কয়েকটি নির্বাচনে অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ এবং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অবশ্যই কিছু ফল দেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচনে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের ওপর কমিশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে যা করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে প্রথমত, কেন্দ্র পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগের জন্য কমিশন ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে ডিজিটাল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন। দ্বিতীয়ত, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ এবং তৃতীয়ত, সামর্থ্যরে মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক নিয়োগ। এসব পর্যবেক্ষকের কাজ হবে নির্বাচন চলাকালে যেকোনো ব্যত্যয় সরাসরি কমিশনকে জানানো এবং প্রয়োজনে অভিযোগের তাৎক্ষণিক তদন্ত করে কমিশনকে জানানো।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আপনারা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা। আমরা সরকারের কেউ নই। আর সরকারের চাওয়া এবং আমাদের চাওয়াও অনেক সময় এক না-ও হতে পারে। সে বিষয়টি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। পাঁচ সিটিতে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এ নির্বাচন আয়োজনে আপনাদের সবাইকে নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সঙ্গে সর্বাত্মক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিভিন্ন বাহিনী প্রধানের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার তার বক্তব্যের সময় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ওই নির্বাচনে আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম সে বিষয়টি মাথায় রেখে সবাইকে কাজ করতে হবে।

সিইসির বক্তব্যের পর উপস্থিত কর্মকর্তারা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে তেমন কোনো হুমকি বা নাশকতার আশঙ্কা নেই বলেও জানান তারা। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তারা। বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের প্রস্তাব দেয়া হয়।

ইসি মো. জাহাঙ্গীর আলম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর উদ্দেশে বলেছেন, নির্বাচন পরিপন্থি কোনো কাজ করলে সে যেই বাহিনীর হোক, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, কমিশন বারবার বলছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি যদি নির্বাচনের আইনকানুনের পরিপন্থি কোনো কাজ করে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান এবং তার ফিরতি ফলাফল ও প্রাপ্তি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গাইবান্ধা নির্বাচনে যাদের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এখনো যাদের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তাদের বিষয়টা ত্বরান্বিত করতে বলা হয়েছে।

ইসি সচিব বলেন, যদি কেউ নির্বাচনের আইনের পরিপন্থি কোনো কাজ করে, তিনি যে বাহিনীর হোক, যেই ব্যক্তিই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য নির্বাচন কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সুতরাং সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে এবং সবাই এ বিষয়ে কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন, যে যার অবস্থান থেকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাদের পক্ষে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এবং সংশ্লিষ্টদের সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য তারা সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন করার জন্য। আমাদের সকলের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন, আমাদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। আমরা আমাদের সহযোগিতা প্রদানের জন্য এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছি।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রের আলোকে অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যেসব কার্যক্রম করা দরকার এবং প্রয়োজনে আমরা রিটার্নিং অফিসারের সাথে আমাদের কনসার্ন যে ইউনিট ভিত্তিক কর্মকর্তারা আছেন তারা যোগাযোগ করে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যখন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য এবং চমৎকার একটা নির্বাচন করার জন্য যা যা কিছু করা দরকার সবকিছু করার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আমরা নির্বাচন করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি। সকল নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করার জন্য আমরা যারা এসেছিলাম সকলকে নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি যে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনারা যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব।