মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৬৬ আইনপ্রণেতার চিঠি

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় পাকিস্তানকে চাপে রাখার দাবি

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য পাকিস্তানকে চাপ দেয়ার দাবিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৬ আইনপ্রণেতা। যদিও বাইডেন প্রশাসন বারবার বলে আসছে, পাকিস্তানের বর্তমান সংকটে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিতে নারাজ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে আইনপ্রণেতারা বলেছেন, আমরা পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। দেশটিতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি বৃহত্তর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেয়ার জন্য আপনার হাতে থাকা সব ধরনের কূটনৈতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা ‘পাকিস্তানে বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতার ওপর যেকোনো আঘাত তদন্ত করতে’ ইসলামাবাদকে রাজি করানোর জন্য ব্লিঙ্কেনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে ওয়াশিংটনে একাধিক ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পাকিস্তানে চলমান সংকটে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর পক্ষ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আপনারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাকে এই কথা অনেকবার বলতে শুনেছেন। আমি আবারও বলছি, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীকে বেছে নেব না। যে সাংবাদিক প্রশ্নটি উত্থাপন করেছিলেন, তার উদ্দেশে বেদান্ত বলেন, যেহেতু এটি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কিত, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ পাকিস্তান একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের চাবিকাঠি। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি লেখার জন্য ৬৬ মার্কিন আইনপ্রণেতার প্রশংসা করেছে পাকিস্তানি আমেরিকান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (পাকপ্যাক)। গত ৯ মে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে দেশটিতে। বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন প্রাণ হারান। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় বেশ কিছু সরকারি ভবনে, যার জেরে গ্রেপ্তার করা হয় আরও অনেককে।

পাকপ্যাক এক বিবৃতিতে বলেছে, ঘটনার এই উদ্বেগজনক মোড় পাকিস্তানি আমেরিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে এবং পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পাকিস্তানি জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান উভয় দলের সমর্থনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সংগঠনটির সভাপতি আসাদ মালিক। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য নির্বিশেষে এই চিঠির জন্য দ্বিদলীয় সমর্থন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের নির্বাচিত কর্মকর্তাদের অটুট প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। চিঠিতে ব্লিঙ্কেনের উদ্দেশে আরও বলা হয়, পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে সমর্থন করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত। সূত্র : ডন

পাকিস্তান : ১৯৭১ স্মরণ করিয়ে ফের সতর্কতা ইমরান খানের

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানে উত্তাপ কেবলই বাড়ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে ঘিরে সম্প্রতি সেই উত্তাপ চরমে পৌঁছায়। তবে টানা বিক্ষোভ ও সহিংসতার একপর্যায়ে নাটকীয়তার মাধ্যমে মুক্ত হন ইমরান। আর মুক্তি পাওয়ার পর থেকে কখনও সরাসরি আবার কখনও আকারে-ইঙ্গিতে ইমরান সবাইকে যা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তা হলো- পাকিস্তানের অতীত থেকে শিক্ষা নেয়ার। এমনকি বৃহস্পতিবারও ১৯৭১ সাল স্মরণ করিয়ে কার্যত সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান যে পরিণতির মুখে পড়েছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বিপজ্জনক পদক্ষেপ পাকিস্তানকে আবারও সেই পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার লাহোরে নিজের জামান পার্কের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ইমরান খান। সেখানে পিটিআই চেয়ারম্যান সামরিক স্থাপনায় হামলার নিন্দা করেন এবং পিডিএম বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে দাঁড় করিয়ে পিটিআইকে মূলধারার রাজনীতি থেকে মুছে ফেলতে চায় বলে অভিযোগ করেন। গত ৯ মে সংঘটিত সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সরকার পিটিআই-এর ওপর ক্র্যাকডাউন চালালেও পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক বাহিনীর সাথে তার দলের ‘কোনও বিরোধ’ নেই। সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের পর নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ইমরান বলেন, তিনি কারও সাথে কোনও সংলাপ করছেন না। কারণ তিনি আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ‘কেবল নির্বাচনের ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে, অন্য কোনো ইস্যুতে নয়’। পিটিআই চেয়ারম্যান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘অন্য পক্ষের (সামরিক বাহিনী) সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই, তবে তারা কেন আমার ওপর বিরক্ত তা আমি জানি না।’ ইমরান তার অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করে এদিন আরও বলেন, ক্ষমতাসীন জোট পিডিএম সেনাবাহিনীর সহায়তায় পিটিআইকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপটি দেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এটি সেই একই পরিণতি ডেকে আনতে পারে যার ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে গিয়েছিল। পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কেউ দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাহলে দেশ পরাজিত হবে।’ লাহোরের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্পস কমান্ডারের হাউস-সহ সামরিক স্থাপনায় হামলার নিন্দা করার সময় ইমরান খান গত ৯ মে সংঘটিত দাঙ্গার রহস্য উদঘাটনের জন্য স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানান। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, যে কোনো সুষ্ঠু তদন্ত এটাই প্রকাশ করবে যে, এই আক্রমণগুলো একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।’ এসময় নিজের দাবির পক্ষে স্বাধীন তদন্ত কমিশনকে তার দল প্রমাণ সরবরাহ করবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া হামলার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ সরকারকে অবশ্যই সরবরাহ করতে হবে বলে জানিয়ে দেন ইমরান।