লেনদেন কেশলেস করার উদ্যোগ

এবার চসিকের পশুর হাট বসছে ২৬টি

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

কোরবানির ঈদের এক মাসের বেশি সময় বাকি। সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এরই মধ্যে হাটবাজার বসানোর কার্যক্রম শুরু করেছে। এবার অন্যবারের তুলনায় বেশি হাট বসবে বলে জানান কর্মকর্তারা। তিনটি স্থায়ী পশুর হাটের সঙ্গে আরো ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে চায় চসিক। সব মিলে পশুরহাটের সংখ্যা হবে ২৬টি। ইতিপূর্বে কখনো এত বেশি সংখ্যক পশুরহাট বসেনি চসিকের উদ্যোগে। এরইমধ্যে এসব হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব শাখা। অনুমতি পাওয়ার পর পশুর হাটের ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে চসিক। কর্মকর্তারা বলছেন, বেশি হাট বাজার থেকে রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি ক্রেতারাও পশুরহাটে স্বস্তির মধ্যে বিকিকিনি করতে পারবেন। এবার চট্টগ্রামের পশুরহাটগুলোতে কেশলেস লেনদেনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে নিরাপদে ক্রেতা বিক্রেতার লেনদেন বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেশি পশুরহাট বসা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, রাজস্ব আয় বাড়ানোর পাশাপাশি ক্রেতাদের সুবিধার্থে হাট সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এ বছর আমরা নগরীতে ২৩টি অস্থায়ী বাজার বাসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তালিকা অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন বিষয়টি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। অনুমতি পাওয়ার পর ইজারাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। আমরা করছি শিগগির হাট বসানোর কার্যক্রম শুরু করতে পারব।

চসিক সূত্র জানায়, এবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজস্ব শাখা। গেল বছর চসিকের ব্যবস্থায় অস্থায়ী হাট বসেছিল তিনটি। এবার সেই হাটের সংখ্যা হবে ২৩টি। ২০২২ সালে ১০টি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসনে আবেদন করে চসিক। অনুমতি পাওয়ার পর চসিক চারটিতে ইজারাদার নিয়োগ দিলেও শেষ পর্যন্ত বাজার বসে তিনটিতে। ২০২২ ও ২০২১ সালে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ছয়টি করে পশুর হাট বসেছিল চসিকের ব্যবস্থায়। এর আগে ২০২০ সালে অস্থায়ী চারটিসহ মোট হাট বসেছিল সাতটি।

চসিকের রাজস্ব শাখা জানায়, প্রস্তাবিত পশুর হাটগুলো হচ্ছে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী গরু বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন হাট, ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের খেজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠ, স্টিল মিল বাজার, পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, উত্তর পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মাঠ, মুসলিমাবাদ টিকে গ্রুপের খালি মাঠ এবং মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের চর চাক্তাই চসিক উচ্ছ বিদ্যালয়ের পাশে খালি জায়গায়, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের গলিচিপা পাড়া বারুনী ঘাটা ও গাজী হালদা খালি জায়গা এবং এই ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, কয়লার ঘর ক্রিয়েটিভ স্কুলের সামনে, বকসু নগর মসজিদ সংলগ্ন মাঠ, মধ্যম শহীদ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, পশ্চিম শহীদ নগর কালু কোম্পানির বাড়ির পাশে, কামরাবাদ সামাদপুর মোড় এবং হাজী পাড়া বারেক শাহ মাজার সংলগ্ন মাঠ, ৫নং মোহরা ওয়ার্ডের জান আলী স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের পরিত্যক্ত মাঠ, দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিায় ওয়ার্ডের বাকলিয়া এক্সেস রোডের পাশে খালি মাঠ এবং ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলি ওয়ার্ডের চৌধুরী হাট। এছাড়া স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। সাগরিকা ও পোস্তারপাড়ে ইাজারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বিবিরহাটে দুইবার দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। বর্তমানে সেখানে খাস কালেকশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে চসিক।

চসিক সূত্র জানায়, অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছে চসিক। এতে বলা হয়, স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার ভিত্তিতে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটাতে অস্থায়ীভাবে পশু বাজার ইজারা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এ ব্যাপারে চসিকের রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার পর আমরা দরপত্র কার্যক্রম শুরু করব। তবে জেলা প্রশাসন সিএমপির মতামত পাওয়ার পর আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। গতবারের চেয়ে এবার বেশি সংখ্যক অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি পাওয়া যাবে।

এদিকে চট্টগ্রামের কোরবানির হাটের লেনদেনকে ক্যাশলেস করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবে চসিক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ মে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই প্রতিনিধি অতিরিক্ত পরিচালক জুলিয়া চৌধুরী এবং যুগ্ম পরিচালক সালাহউদ্দীন মাহমুদ।

জুলিয়া চৌধুরী জানান, কোরবানির বাজারকে কেন্দ্র করে দেশে ৭০ হাজার কোটি টাকার নগদ অর্থ লেনদেন হয়। নগদ লেনদেনের ঝুঁকি নিরসনে এবং সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০২২ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রথমবারের মতো ছয়টি বুথ বসায় ডিজিটাল লেনদেনের জন্য। সেবার মাত্র চার দিনে ৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোরবানির বাজারে এ সেবা আরো প্রসারিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময় প্রাথমিকভাবে এ বছর সাগরিকা গরুর হাট এবং নুরনগর হাউজিং গরুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন বুথ চালুর বিষয়ে ভূমি ও বিদ্যুৎসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন মেয়র। এ দুটি বুথে এটিএম মেশিন, মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেন সেবা, ডিজিটাল ব্যাংকিং ইত্যাদির সুবিধা উপভোগ করবেন কোরবানির বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা।

সভায় মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার কাজ চলমান। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের ডিজিটাল সেবার উদ্যোগ চট্টগ্রামের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সুফল ঘরে তুলতে সহায়তা করবে, পাশাপাশি অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির হারও বৃদ্ধি করবে। এবার দুটি হাটের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে সবগুলো কোরবানির হাটে ক্যাশলেস লেনদেনের সুবিধা সৃষ্টি করবে চসিক।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, ভিসা কোম্পানির প্রতিনিধি মো. নাসিমুল ইসলাম, মাস্টারকার্ড কোম্পানির প্রতিনিধি সৈয়দ নাবিল রাইয়ান।