দেশজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় অর্ধশতাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৬২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। তবে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।

গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ৫২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫১ জন ও ঢাকার বাইরের একজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪১৪ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭২ জন। আর ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৫৪২ জন। চলতি বছরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ হাজার ২৪০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭২১ জন এবং ঢাকার বাইরের ৫১৯ জন। আর এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা গেছেন ১২ জন।

গত বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। অন্যদিকে ২০২১-এ সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গত বছরের চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তাই এখন থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধী কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিতে হবে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে। এবছরও ঢাকা শহরে রোগীর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে, পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও রোগী পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যার ফলে ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে। সাধারণ সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কথা থাকলেও গতবছর নভেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।

গত ৯ এপ্রিল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে প্রথম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সারা বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগে কয়েক মাস যেমন মে, জুন ও জুলাই পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। এখন ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হচ্ছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, আগের সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব। তবে এই সময়গুলোতে পিক সিজন ও লিন সিজন ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ এডিসের জন্য একটি উর্বর সময়, অন্যটি অনুর্বর মৌসুম। আমরা সেই অনুসারে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, শহর এলাকায় এডিস মশার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। যে কারণে আমাদের সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। এখান থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়, তা বাস্তবায়ন করতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। যে কারণে অন্য দেশগুলোর চেয়ে আমরা তুলনামূলক ভালো আছি।

গত বছর ডেঙ্গু সংক্রমণ বেশি ছিল, সেই হিসাবে চলতি বছরে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, গত বছরেও সমসাময়িক দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অবস্থান ভালো ছিল। কিন্তু তাতে আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম না। সেজন্য আমাদের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি আছে কি না, আরো কিছু করণীয় আছি কি না; তা খতিয়ে দেখতে সভা করা হয়েছে।

গত ৭ মে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে আবারো ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রভাব বাড়ছে। ডেঙ্গু সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে হলে সবাইকে সজাগ হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাসা বাড়ির ছাদ, আঙিনায় যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এবার যে ধরন আমরা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে এই বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের তুলনায় বাড়বে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে আছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। এছাড়া আছে পানি প্রবাহের সিস্টেম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সব মিলিয়ে মৌসুম যেমন ছিল সেটি হয়তো থাকবে না। ডেঙ্গুর পিক সিজন আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস। কিন্তু গতবছর তার ব্যতিক্রম ছিল, পিক হয়েছিল অক্টোবর মাসে। মার্চে সার্ভে করা হয়েছিল এডিস মশার। তবে এখন সেটা অনেকখানি পরিবর্তন হয়ে গেছে। যার কারণে ডেঙ্গু বেড়েছে।