ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অব্যাহত নির্বাচন বর্জন

রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ছে বিএনপি

রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ছে বিএনপি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা আগেই দিয়েছে জাতীয় সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল বিএনপি। দলের অনেক নেতা এখন সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছেন। এর ফলে দল হিসেবে ভোটের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে বিএনপি। দিন দিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে তারা ছিটকে পড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতার বাইরে, কোনো নির্বাচনে এখন অংশ নিচ্ছেনা, এর ফলে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করেও তাদের নির্বাচনে আনতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএনপি বিদেশি হস্তক্ষেপের আশায় বসে আছে। তারা চাচ্ছে, ভোটে না থেকে বিদেশি শক্তিগুলো হয়তো তাদের ক্ষমতায় আনবে।

সূত্র জানায়, পাঁচ সিটি ভোটে বিএনপি অংশ না নিলেও তাদের দলের নেতাদের অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সর্বশেষ সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন বর্জনের। তিনি বলেছেন, আমি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছিলাম। জীবন থাকতে এ আদর্শের, দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আমি বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, আমার মা এবং আলেম-ওলামাদের পরামর্শে এ নির্বাচন বর্জন করলাম।

তিনি বলেন, তিনি নির্বাচনমুখী নন, রাজনীতিমুখী। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবসান হলো আরিফের মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে দীর্ঘদিনের ধূম্রজালের। এদিকে আরিফুল হকের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবরে মর্মাহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গত শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, আরিফুল হক নির্বাচনে এলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতো।

মেয়রের ঘনিষ্ঠ একজন বলেন, তিনি দলের সুতোয় বাঁধা। তিনি দলের জন্য নির্বাচন বর্জন করেছেন। তাই বলে আমরা বসে থাকতে পারি না। আমরাও বিকল্প ভাবনা রেখেছি। বিকল্প হিসেবে মেয়রের স্ত্রী শ্যামা হকের নাম উল্লেখ করে বলেন, তিনি প্রার্থী হলে মেয়র আরিফের চেয়েও বেশি ভোট পাব আমরা। কারণ বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ৮০ হাজার ভোটব্যাংক রয়েছে শুধু (শ্যামা) ভাবির। যা প্রতিবছর আরিফের অ্যাকাউন্টে যেত।

উভয় সংকটে বিএনপি : সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাওয়া একরকম এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ভিন্ন রকম। নেতাকর্মীরা যাতে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেয় সেজন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অধীনে বা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তারা নানারকম আন্দোলনও শুরু করেছে। তারই অংশ হিসাবে পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এই নির্বাচনে ভোট না দিতেও তারা আহ্বান জানিয়েছে। সর্বশেষ গাজীপুরে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ২৯ নেতাকর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করেছিল দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া তাদের হাতে আর কোনো উপায়ও নেই। এই সরকার এবং তাদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। যাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে আছি, সেখানে তো নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই প্রেক্ষাপটে আমরা দৃঢ় অবস্থান নিয়েছি। আমাদের যারা এর বিরুদ্ধে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া ছাড়া তো আমাদের কোনো উপায় নেই।

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাস্তবতা এটাই যে, বিএনপি যদি ক্রমাগতভাবে নির্বাচন বর্জন করতে থাকে তাহলে তাদের পরিণতি অতীতের অন্য দলগুলোর মতোই হবে।

বিএনপি ভেবেছিল তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে সরকারের মধ্যে ঝাঁকুনি লাগবে, সরকার কাঁপবে, পড়ে যাবে। কিন্তু সরকারের কিছুই হয়নি। একটু কাতুকুতু লেগেছে, এর বেশি কিছু না।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি ভোট বর্জন করলে নির্বাচন বন্ধ হবে না, বরং বিএনপি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি অনেক ষড়যন্ত্র করবে। সে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরই মধ্যে ভোট বর্জনের কথা বলেছেন। তারা ভোট বর্জন করলে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবেন। ভোট বর্জন করলে ওরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। দল হিসেবে ওরা টিকবে না। এর আগে নির্বাচন না করায় ওদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আবারও নির্বাচন না করলে ওদেরই ক্ষতি হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত