ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উত্তোলন বাড়াতে নানা উদ্যোগ

ইলিশাকে ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র ঘোষণা

ইলিশাকে ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র ঘোষণা

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামের অস্থিরতা ও উচ্চমূল্য শিগগিরই স্বাভাবিক হচ্ছে না। তবে জ্বালানি সংকটের অস্থিরতার মধ্যে স্বস্তির বার্তা দিয়েছে সরকার। ভোলার ইলিশা কূপটি দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যকার ঘাটতি পূরণে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের মালেরহাট এলাকায় ইলিশা-১ নামের আরেকটি নতুন গ্যাসকূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। গতকাল সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ২৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ইলিশা থেকে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ গ্যাসক্ষেত্রে সম্ভাব্য মজুত ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, দৈনিক উত্তোলন করা যাবে ২০-২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। একটা বড় সম্ভাবনার দিক উন্মোচন হলো। দেশের মানুষের জন্য এটা সুখবর’। এখানে পাওয়া গ্যাসের দাম ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই পরিমাণ আমদানি করা গ্যাসের দাম পড়বে ২৮ হাজার কোটি টাকা। পাইপলাইন নির্মাণ করে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে পাইপলাইন সম্পন্ন করতে চায় সরকার। পাইপলাইনে ভোলার গ্যাস সরবরাহ শুরু হতে তিন বছর লাগবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এখন দেশের দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার জায়গা। পাইপলাইনে গ্যাস আনতে হলে আড়াই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। অনেকগুলো নদী ক্রসিং আছে। জমি অধিগ্রহণ, অনেক কাজ। এ কারণে অল্প অল্প করে ঢাকায় আনা যায় কি না সেটা দেখছি। ভোলার গ্যাস দিয়ে মানুষকে কীভাবে সুবিধা দেয়া যায়, সেটা আমরা বিবেচনা করে দেখছি।

বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বাড়ছে। এই সংকটের মধ্যে একের পর এক আশার আলো দেখাচ্ছে দ্বীপজেলা ভোলা। জেলায় এখন পর্যন্ত আটটি কূপে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ইলিশা-১ নামের আরেকটি নতুন গ্যাসকূপেও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেল। ধারণা করা হচ্ছে দৈনিক এই কূপ থেকে ২০২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে ওই কূপে ১৮০ থেকে ২০০ বিসিএফ ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশে জ্বালানির সংকট দূর করার লক্ষ্যে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। ১৯৯৩-৯৪ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিনে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পর ভোলা সদর ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় আটটি কূপ খননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইলিশা-১ জেলার নবম গ্যাসক্ষেত্র।

প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের পর তৃতীয় স্তরেও ভোলার ইলিশা-১ কূপে মিলেছে গ্যাসের সন্ধান। ইলিশা-১ নামের নতুন কূপে তৃতীয় স্তরের ড্রিল স্টেম টেস্ট (ডিএসটি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আগুন প্রজ্বলনের মাধ্যমে এ গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম এ উত্তোলন কাজ করছে। এ কূপের তৃতীয় স্তর থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। প্রাথমিকভাবে ২০০ বিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে।

কূপে গ্যাসের চাপ ভালো বলে নিশ্চিত করেছেন বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, গত ৯ মার্চ ইলিশা-১ কূপ খনন শুরু হয়। ৩ হাজার ৪৭৫ মিটার গভীরতায় ডিএসটির মাধ্যমে সফলভাবে কূপ খনন শেষ হয় ১৪ এপ্রিল। এরপর বিভিন্ন ধাপে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনটি স্তরে গ্যাসপ্রাপ্তির সমূহ সম্ভাবনা দেখা যায়। আলমগীর হোসেন আরো বলেন, কূপটির তৃতীয় স্তরে আগুন প্রজ্বলনের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তৃতীয় স্তরের পরীক্ষা শেষে প্রতিটি স্তর থেকে দৈনিক গড়ে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের আশা করা হচ্ছে। এটির প্রথম স্তর ৩ হাজার ৪৩৩ মিটার থেকে ৩ হাজার ৪৩৬, দ্বিতীয় স্তর ৩ হাজার ২৬৮ মিটার থেকে ৩ হাজার ২৭৫ মিটার এবং তৃতীয় স্তর ৩ হাজার ২৫০ মিটার থেকে ৩ হাজার ২৫৪ মিটার।

বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগও জানিয়েছে, গত ২৩ জানুয়ারি সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপাতা গ্রামে ভোলা নর্থ-২ নামে একটি কূপে পরীক্ষামূলকভাবে আগুন প্রজ্বলনের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হয়। এবার আরো একটি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। এ পর্যন্ত ভোলায় মোট ৩টি গ্যাসক্ষেত্রের ৯টি কূপ রয়েছে। এগুলো হলো- বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহাবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ, সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ভোলা নর্থ-এর দুইটি এবং সর্বশেষ ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রের ইলিশা-১ এর একটি কূপ। এসব কূপে মোট মজুদ গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৭ টিসিএফ ঘনফুট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত