হঠাৎ রাজনৈতিক উত্তাপ

* পুলিশ-বিএনপির ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া * বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আটক * বাসে আগুন-ভাঙচুর * আহত ১২ পুলিশ

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একটি বিআরটিসি বাসেও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবিসহ অন্তত ১০ থেকে ১২ নেতাকর্মী আটক করার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে পুলিশের ১২ সদস্য আহতের দাবি করেছে বাহিনীটির পক্ষ থেকে। বিএনপির পূর্ব ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে এ ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান নেতাকর্মীরা। এ সময় নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বিআরটিসির বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আশরাফ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৪টার কিছু আগে সায়েন্সল্যাবের সিটি কলেজের সামনে ওই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একই সময় একটি বিআরটিসি বাসে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করে। বিএনপির পক্ষে অভিযোগ করা হয়েছে- এর আগে ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের কাছ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি সিটি কলেজের সামনে এলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের পক্ষ থেকে ওই পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ফলে দুপুরে নির্ধারিত সময়ের আগেই নেতাকর্মীরা ওই এলাকায় এসে জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় ধানমন্ডি এলাকার সড়ক ও ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। তবে বিকাল সাড়ে ৩টায় পদযাত্রা শুরুর কথা থাকলেও দুপুর ১টার পর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা ধানমন্ডিতে জড়ো হতে থাকেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ওই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের।

মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ

রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, বিএনপির একটি পূর্ব নির্ধারিত পদযাত্রা ছিল। ধানমন্ডি বাংলাদেশ মেডিক্যাল থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রাটি আসার কথা ছিল সিটি কলেজ পর্যন্ত। খুব শান্তিপূর্ণভাবে তারা পদযাত্রা শুরু করেছিল। প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার লোক অংশ নিয়েছিলেন। সামনের সারিতে যেসব নেতাকর্মীরা ছিলেন তারা খুব ভালো আচরণ করেছেন। এ পর্যন্ত (সায়েন্সল্যাব) এসে তাদের যা করার কথা ছিল তাই করেছেন। সব সিনিয়র লিডাররা চলে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, পদযাত্রা শেষের সারি থেকে কিছু ছেলে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা ইটপাটকেল মারে। ব্যানারের লাঠি দিয়ে পুলিশকে লাঠিপেটা করে। পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়ার চেষ্টা করে। এর মধ্যেই তারা বিআরটিসির একটি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেও পুরোপুরি জ্বালিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। পরে বাসের গ্লাস ভেঙেছে। এই সংঘর্ষে আমাদের ১২/১৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি তারা না করলেও পারত। এখন আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

পুলিশ কত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে, জানতে চাইলে রমনার ডিসি বলেন, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতি কন্ট্রোলে আমাদের সিআরপিসি নিয়ম আছে, সেই নিয়ম অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করেছি। যেন জানমালের ক্ষয়ক্ষতি তারা কম করতে পারে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি পদযাত্রার নামে নাশকতার চেষ্টা চালিয়েছে, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করেছে। গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই চলছে। পুলিশের কাজে বাধা ও হামলা, সরকারি যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও উল্লেখ করেন রমনা ডিসি।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হামলা, আহত করাসহ অসত্য মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছেন। বিবৃতিতে দাবি করা হয়- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শেখ রবিউল আলম রবি, ধানমন্ডি থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন সৈকত, ধানমন্ডি থানা বিএনপির সাবেক সদস্য- রাইসুল ইসলাম চন্দন, ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাওন, ১৮নং ওয়ার্ডের ইউনিট বিএনপি নেতা মালেক, নিউমার্কেট থানা বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক, হাজারীবাগ থানাধীন ২২নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক সাব্বির আহমেদ রাব্বী, নিউমার্কেট থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রানাসহ ২৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন। এছাড়া বিবৃতিতে পুলিশের টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে ধানমন্ডি থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম টিটু, ধানমন্ডি থানাধীন ১৫নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনির সিকদার, সদস্য লিটন মোল্লা, মুগদা থানা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মজিবর মোল্লা, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জিয়াউর রহমান জিয়া, নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আউয়াল আহমেদ অদিল ও ছাত্রদল নেতা আবুল বাশার, ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকসহ শত শত নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ।