ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গাজীপুর সিটির ভোট আজ

থাকছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা
গাজীপুর সিটির ভোট আজ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট উপলক্ষ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সুষ্ঠু ভোট করতে গাজীপুরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের মোট ১৩ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকছেন।

সূত্র জানায়, গাজীপুর ভোটের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনর আগে এটি ইসির আস্থা ফেরানোর নির্বাচন। তাই ভোট সুষ্ঠু করতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল ৮টা থেকে টানা বিকাল ৪টা চলবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ করা হবে। এবার এ নির্বাচনে আট মেয়র প্রার্থীসহ ৩৩৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী সরাসরি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন।

ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে যে দলের বা যেই হোক না কেন, তাকে সাথে সাথে আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। অনিয়মের মাত্রার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কী নেয়া হবে, তা নির্ভর করবে। ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, অনিয়মের মাত্রার ওপর শাস্তি নির্ভর করবে। আমাদের কাছে সবগুলোই (৪৮০টি) গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তবে এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনে গাজীপুরসহ বিভিন্ন বিভাগের ৫ হাজার পুলিশ সদস্য, প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে মোট ৯৬০ জন আনসার ব্যাটালিয়ান, প্রতি কেন্দ্রে ১০ জন করে মোট ৪ হাজার ৮০০ জন গ্রাম পুলিশ, ৫৭টি ওয়ার্ডে মাজিস্ট্রেটে ১৭১ জন আনসার বাহিনীর সদস্য কাজ করবেন।

এছাড়া, ৫৭ ওয়ার্ডে ৫৭ জন মাজিস্ট্রেট ও ১৯ জন জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট কাজ করবে। ২০ প্লাটুন বিজিবি এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ৩০টি টিম কাজ করবে।

কাশিমপুর থানায় ৪৭, কোনাবাড়ি থানায় ৪৩, বাসন ৪২, সদর থানায় ৯৬, গাছা ৫৭, পূবাইল থানায় ৩২, টঙ্গী পূর্ব ১১১ ও টঙ্গী পশ্চিম ৫২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রে ৩৫১টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ১২৯টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে।

এই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেন- মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, নৌকা প্রতীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ। এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সূত্র জানায়, ৮ হাজার ১০০ ইভিএমের মাধ্যমে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটার তাদের ভোটধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ ও ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী এবং ১৮ জন রয়েছে হিজড়া ভোটার। ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসি টিভির মাধ্যমে ঢাকার আগারগাঁও থেকে প্রতিটি ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণ করবে কমিশন। এক্ষেত্রে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে টিভি স্ক্রিনে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য নির্বাচন কমিশনার এবং ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৬ জুন ভোট হয়েছে। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয় গত ১১ মার্চ। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বর্তমানে যারা নির্বাচিত রয়েছেন তাদের মেয়াদ শেষ হবে।

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উদ্দেশ্যে ভয়ভীতি দেখিয়ে বক্তব্য দেয়ায় ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের লাটিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আজিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি। নৌকা ছাড়া কাউকে ভোটকেন্দ্রে আসতে দেবেন না বক্তব্য দিয়ে ত্রাস ও ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন আজিজুর। গতকাল বুধবার ভোটের আগের দিন নির্বাচন কমিশনে শুনানির পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং তা স্বীকার করার পরিপ্রেক্ষিতে লাটিম প্রতীকে কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

আজিজুর রহমান গত সোমবার (২২ মে) সন্ধ্যা ৭টায় পুবাইল এলাকার কলের বাজার নামক স্থানে মিছিল ও জনসভা করেন। এ জনসভায় ‘নৌকা ছাড়া কাউকে ভোট কেন্দ্রে আসতে দেবেন না’ বলে ত্রাস সৃষ্টি এবং ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য দেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশক্রমে এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

বেআইনি মিছিল, জনসভা ও ত্রাস সৃষ্টি এবং ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য প্রদান স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি ৯১ এবং সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৩১ ও ৩২ এর পরিপন্থি। তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর এ প্রার্থীকে তলব করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত