আলোকিত বাংলাদেশকে প্রধান প্রকৌশলী

গণপূর্ত অধিদপ্তর শুধু ভবন নির্মাণ করে না সরকারের পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করে

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তর সরকারি বাসভবন-স্থাপনা নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। যুগোপযোগী প্রকৌশল প্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই, পরিবেশবান্ধব সরকারি অবকাঠামো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে। প্রায় ২০০ বছর ধরে গৌরবের সঙ্গে এসব কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমালোচনাও কম নয়। এখানে একসময় আলোচিত জিকে শামীমের মতো টেন্ডারবাজদের দাপট ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ সমালোচনার মুহূর্তে দায়িত্বে পেয়ে সিন্ডিকেট ভেঙে কাজে গতি ফিরিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার।

প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বহুতল ভবন নির্মাণকাজে গতিশীলতা আনতে গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন তিনি। সীমিত সময়ে অস্থির পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক করা এবং প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে। একই সঙ্গে আবাসন সংকট নিরসনে গণপূর্তের উন্নয়নের যে প্রশংসা মিলছে, তা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য স্বস্তির বার্তা দেয় বলে উল্লেখ করেন প্রকৌশলী শামীম আখতার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক আলম

আলোকিত বাংলাদেশ : সরকারের আবাসন সংকট নিরসনের পথিকৃৎ গণপূর্ত অধিদপ্তর। এই প্রতিষ্ঠানে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার নজির রয়েছে। প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে পেয়ে সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে পেরেছেন কি না?

শামীম আখতার : সিন্ডিকেট ভেঙে কাজে গতি ফেরানো আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ, গণপূর্ত অধিদপ্তরে একদিনে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট সহজেই ভাঙা সম্ভব নয়। সেজন্য সিন্ডিকেট ভাঙতে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প ও কেনাকাটার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বড়সর পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এতে সিন্ডিকেটের থাবা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আলোচিত জিকে শামীমসহ ঠিকাদারদের বিভিন্ন সিন্ডিকেটও ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এখন গণপূর্তে সিন্ডিকেট শেষ হয়ে গেছে। কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অসাধু কর্মকতা-কর্মচারীদের জোগসাজশে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।

আলোকিত বাংলাদেশ : রাজধানী ও চট্টগ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে গণপূর্ত। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি কেমন?

শামীম আখতার : সরকারের নির্মাণ কাজের পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর। সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে কাজের গুণগত মান এবং পরিধি বজায় রেখে দ্রুততম সময়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা হচ্ছে। অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের আগেও প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণকাজের গুণগতমান শতভাগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রকল্প প্রণয়ন থেকে শুরু করে তা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতারও অবসান ঘটেছে। প্রকল্পের কাজের গতি ফেরাতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে।

আলোকিত বাংলাদেশ : একদিকে ডেভেলপার কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে, অন্যদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরও বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। এখানে ডেভেলপার কোম্পানি ও গণপূর্তের কাজের গুণগত মানের কোনো পার্থক্য রয়েছে কি না?

শামীম আখতার : গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় রাজধানীসহ সারা দেশে অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ডেভেলপারদের সঙ্গে গণপূর্তের মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে গণপূর্ত কাজের গুণগত মান বজায় রেখে মানুষের আবাসন সংকট নিরসনে ২০তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করছে। সেখানে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ছয়তলা ১০ তলা কিংবা যখন যা পারে ভবন নির্মাণ করছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর বহুতল ভবন নির্মাণে জমির সঠিক ব্যবহার করছে। সরকারের অ্যালোকেশন অব রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক ও আবাসিক অবকাঠামোসমূহ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত। ঢাকায় ১ ইঞ্চি জমিও কেউ ছাড়তে চান না। অসংখ্য ডেভেলপার কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা করছে, ভবনের চারপাশে ১ ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা রাখে না। সেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তর বহুতল ভবন নির্মাণে ভবনের চারপাশে বিশেষ নজর রাখে। ভবনে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বিনোদন, খেলাধুলা কিংবা শরীর চর্চার জন্য ফাঁকা জায়গা রাখে। গাছপালা লাগানো, ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্টেশন এবং ওয়ার্কওয়েসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা নিশ্চিত করে ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ভবন নির্মাণে ইঞ্জিনিয়ারিং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা শতভাগ বাস্তবায়ন করছে। গণপূর্তের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রকৌশলীরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

আলোকিত বাংলাদেশ : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনে গণপূর্ত কাজ করছে। তবে সম্প্রতি রড, সিমেন্ট ও বালুর দাম বাড়ায় বহুতল ভবন নির্মাণে কোনো প্রভাব পড়েছে কি না?

শামীম আখতার : রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। রড, সিমেন্ট ও বালুসহ নির্মাণ সামগ্রীর ঊর্ধ্বগতি দামের ছোবল থেকে রেহাই পায়নি বাংলাদেশ। তবে যেসব ঠিকাদার নির্মাণসামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতি আগের টেন্ডারে কাজ পেয়েছিলেন, তারা নিজেদের ঠিকাদারি লাইসেন্সের সুনাম ধরে রাখতে সীমিত লাভে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বড় প্রকল্পের কাজে ঠিকাদার লাইসেন্স আপডেট রাখতে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন। সেজন্য গণপূর্তের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ধীরগতি হচ্ছে, এমনটি বলার কোনো সুযোগ নেই। দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ চলছে। কারণ ঠিকাদাররা জানেন, প্রকল্পের কাজে দীর্ঘসূচিত্রা তৈরি করলেও নির্মাণ সামগ্রীর দাম কম পাবে না। বরং প্রকল্পের কাজে দীর্ঘসূচিত্রা তৈরি করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। আগামীতে কাজ পেতে লাইসেন্সের সমস্যা হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করার চেষ্টা করছে গণপূর্তের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

আলোকিত বাংলাদেশ : সারা দেশে অবশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণের অগ্রগতি কেমন?

শামীম আখতার : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে সারাদেশে ২০০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। বাকি মসজিদগুলোর মধ্যে বেশকিছুর কাজসম্পন্ন হয়েছে, আর কিছু মসজিদের নির্মাণকাজ চলছে। আশা করছি, চলতি বছরে আরো ১০০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।

আলোকিত বাংলাদেশ : টেকসই ও সাশ্রয় আবাসন নির্মাণ নিশ্চিতে গণপূর্ত কী ধরনের ভূমিকা রাখছে?

শামীম আখতার : সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তর অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। অধিদপ্তরে যেসব প্রকৌশলীরা আসেন তারা মেধাবী ও অভিজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ধরে রাখার আলোকেই তারা কাজ করছেন। স্থাপত্য অধিদপ্তরও কাজ করছে। অন্য কোনো সংস্থায় এমন সুযোগ থাকে না। বেসরকারি ভবন মালিকেরা অনেক সময় মাটি পরীক্ষা করাতে চান না, যা ভবন নির্মাণের পর ঝুঁকি বাড়ে। সেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তর ভবন নির্মাণের আগে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে মাটি পরীক্ষা করা হয়। মাটি পরীক্ষায় অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। তাই গণপূর্ত অধিদপ্তর শুধু কনক্রিটের দেয়াল তৈরি করে না, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করে।