মার্কিন ভিসা নীতিতে বিচলিত নয় ঢাকা

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপিই বড় বাধা

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে কূটনৈতিক মহলে জোরেসরে আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না থাকায় সুষ্ঠু-অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাটা দুরূহ হয়ে পড়বে। নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে দল গুছিয়ে আনছে আওয়ামী লীগ। এদিকে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেই ঘোষণা দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকার উৎখাতের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন হতে দিবেনা বলেও হুশিয়ারি দিচ্ছে বিএনপি। তবে দলটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য বিগত নির্বাচনের আগে যেভাবে জ্বালাওপোড়াওয়ের পথ বেচে নিয়েছিল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও নাশকতার পথে হাটতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করলেও শেষ বেলাতে মারমুখী হয়ে উঠতে পারে। এরই মধ্যে তারা গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের উপরে হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। গত ২৩ মে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকার দুই এলাকায় বিএনপির দুটি পদযাত্রার কর্মসূচি ছিল। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের সারাদেশে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। আগুন সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মানুষের জীবন ও সম্পদ। এমন কি শিশু ও নারীরাও পর্যন্ত বিএনপির জ্বালাওপোড়ায়ের থেকে রক্ষা পায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞাই বলে দেয় প্রতিটি রাজনৈতিক দল পৃথক রাজনৈতিক মতো প্রচারের বা রাজনৈতিক তৎপরতা পরিচালনার উদ্দেশ্যে নিজেদের প্রকাশ করে। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রত্যেকের রাজনৈতিক কৌশল আলাদা হবে। সেই কৌশলে কারা এগিয়ে যাবে তা জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সামনে ফুটে উঠবে।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করলে বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ক্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী নতুন যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন প্রথমে টুইট করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে এ বিষয়ে তাঁর বিস্তারিত বিবৃতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি চালুর বিষয়টি তুলে ধরেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে : ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ফলে জ্বালাওপোড়াও করা দলের নেতাকর্মীরা আরো সচেতন হবে। এ ভিসা নীতি নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আমরা দেশে জ্বালাওপোড়াও চাই না। গতবার তারা ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি বগি জ্বালিয়েছে। জ্বালাওপোড়াও আর রাস্তা দখল করে আন্দোলন কেউ চায় না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করলে সরকার সহযোগিতা করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেন না, প্রধানমন্ত্রী যে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন চান। সেটাকেই আরো শক্তিশালী করবে এ নতুন নীতি। ড. মোমেন বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে গত ৩ মে আমাকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের অঙ্গীকার লক্ষ্য রেখেই নতুন এ ভিসা নীতি করা হয়েছে। এটা তো ভালোই। আমাদের নীতিকেই তো তারা সমর্থন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা নিষেধাজ্ঞা নয়। বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, তারা নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় যে সহিংসতা চালিয়েছে, সেটার জন্যও ভিসা বিধিনিষেধ আসতে পারে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই এই ভিসা নীতিতে সরকারের উদ্বেগের কিছু নেই।

গতকাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মজয়ন্তীতে কবির কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা নির্বাচন চাই। যুক্তরাষ্ট্র বাধার কথা বলেছে। আমাদেরও একই কথা। বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের ভিসা দেয়া হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেটি আওয়ামী লীগেরও কথা বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের অবশ্যই আমরা প্রতিহত করব। বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে এখানে বক্তব্য আছে।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন আমরা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করব। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচন কমিশনকে আমরা ফ্যাসিলিটেট করব, সব ধরনের সহযোগিতা করব। আমার সর্বশেষ কথা, নির্বাচনকে সামনে রেখে যারা আন্দোলনের নামে বাসে আগুন দেয়, বাসে ভাঙচুর করে, এরাই একটা পলিটিক্যাল ভায়োলেন্সে আছে। কাজেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিএনপিই বড় বাধা।