ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নাটকীয়তায় গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত

সব পক্ষই সন্তুষ্ট : ইসি ভোটের হার অন্তত ৫০%
নাটকীয়তায় গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত

নানা নাটকীয়তার মধ্যে কোনো সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ছাড়া, সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় সিটির ৫৯ ওয়ার্ডের ৪৮০ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বশেষ রাত ১০টা পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন ১২৩টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম।

এসব কেন্দ্রে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ৬৩ হাজার ৮৭৯ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৯৯ ভোট।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনে প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটারের লম্বা লাইন ছিল। দুয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ধীরগতি ছিল। এতে ভোটারদের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ফলে রৌদে অপেক্ষমাণ ভোটারদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিকে, গোপন কক্ষে ঢুকে প্রভাবিত করায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ দুই কেন্দ্র থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন ১০১ নম্বর কেন্দ্রে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ ও ১০৩ নম্বর কেন্দ্রে আবু তাহের। মহানগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা রাশিদা আক্তার বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছি। ৮টা থেকে ভোট শুরু হলে প্রথমেই সুযোগ পেয়ে ইভিএমে ভোট দিতে পেরে খুশি। ১ মিনিটেরও কম সময় লেগেছে ভোট দিতে।

একই কেন্দ্রে হাজেরা বেগম (৬০) বলেন, অনেক সুন্দর ভোট হচ্ছে। কোনো ঝামেলা নেই। ভোট শুরু হওয়ার ১০ মিনিট আগে কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছি। কক্ষে প্রবেশ করে অল্প সময়ের মধ্য ভোট দিতে পেরে আমি অনেক খুশি।

আরেকটি কেন্দ্রে বাবুল চন্দ্র ঘোষ (৫০) নামে এক ভোটার জানান, পৌনে ৯টার দিকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কক্ষে প্রবেশ করতে পারিনি। ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ভোটার সকাল থেকেই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, মানুষ এ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়ার জন্য এসেছেন।

নজরুল ইসলাম (৫২) বলেন, সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়ানোর দেড় ঘণ্টা পর কক্ষে প্রবেশ করে ভোট দিয়েছি। দেড় ঘণ্টা কেন লাগল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতি অনেক। ধারণা করিনি এত ভোটার আসবে। আগে জানলে সকাল ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তিনি ভোট দিতে ৪ মিনিট সময় লেগেছে বলে জানান।

ভোটের পরিস্থিতি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কোনো কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট না দিয়ে ফেরত গেছে, এমন ঘটনা নেই। সকালে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও এখন অনেক বেড়েছে। ভোটাররা উৎসবের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে এসে সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিয়েছেন। কোথাও আইনশৃঙ্খলা অবনতির অভিযোগ কোনো প্রার্থী দেননি।

জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখরভাবে ভোট হয়েছে। ভোটারের উপস্থিতিতো দেখলেনই। কোনো সহিংসতা নেই। মূল কথা, যার ভোট সে দিয়েছেন। আগেতো বলত একজনের ভোট আরেকজন দিচ্ছে। কেউ ভোট দিতে পারেননি- এমন একটি অভিযোগও পাইনি। তবে ইভিএম নতুন, তাই একটু সময় লাগছে।

জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক অনুযায়ী কাজ করেছি। ভালো একটা নির্বাচন হয়েছে। আশা করি, দেশবাসী সন্তুষ্ট হবেন।

আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে হওয়ায় নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী, ভোটার ও জনগণ অত্যন্ত সন্তুষ্ট।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর আরো জানান, গাজীপুরের ভোট মিডিয়াসহ সবাই দেখেছেন। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষেভাবে ভোট হয়েছে। প্রার্থী সবাই সন্তুষ্ট, ফলাফল যা-ই হোক, সবাই মেনে নেবে বলেছেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের আমরা দেখেছি; রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও ইসির নিজস্ব পযবেক্ষকসহ সবার কাছ থেকে একই তথ্য পেয়েছি- গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধভাবে নির্বাচন হয়েছে। ভোটে যারা অংশ নিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীরা বলেছেন, নির্বাচনি পরিবেশ ও ব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।

গণমাধ্যমে প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া উদ্ধৃত করে নির্বাচন কমিশনার জানান, ভোটের পরিবেশ নিয়ে তারা সন্তুষ্টির কথা বলেছেন, যে ফলাফলই আসুক না কেনো তারা মেনে নেবে- বলেছেন।

ভোটের হার এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোট পড়ার হার এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমরা আশা করছি, ৫০ শতাংশের নিচে হবে না। ভোট শেষে সব ফলাফল হওয়ার পর সঠিক ভোটের হার জানা যাবে। প্রায় ১২ লাখ ভোটারের এ নির্বাচনে দিনভর ভালো ভোটার উপস্থিতি ছিল। বিকালের দিকে অনেককে কেন্দ্রের চৌহদ্দীর মধ্যেও দেখা গেছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের শেষ সময়ে কেন্দ্রের বেষ্টনীর মধ্যে ভোটার থাকলে আইন অনুযায়ী তার ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন অব্যাহত রাখার বিধান রয়েছে। তাই সময় শেষেও ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে- এটাই নিয়ম। ইভিএমের ক্ষেত্রে ভোট দিতে কিছুটা হয়তো দেরি হতে পারে। এটাই একমাত্র কারণ নয়।

মো. আলমগীর জানান, ভোট দিতে লাইনে অপেক্ষা, আগে এলে আগে ভোট দেয়া ও দুয়েকটি কেন্দ্রে এজেন্ট প্রভাবিত করার চেষ্টা করার বিষয় কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুটি কেন্দ্রে এজেন্টরা ভোটারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের নজরে অন্যান্য কেন্দ্রে অনিয়মের তথ্য আসেনি। যেখানে নজরে এসেছে, সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি। ৪ হাজারের বেশি সিসি ক্যামেরা। একবারে সব দেখা সম্ভব না। সব অপরাধীকে একসঙ্গে হয়তো ধরা যাবে না, যাকে দেখা যাবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যে উদ্যোগটা, যে সিসি ক্যামেরার জন্য অনেকেই অনিয়ম করতে ভয় পেয়েছে, এটাই আমাদের সফলতা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত