উৎসবে মেতে ছিল ভোটাররা

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। সিটি ভোটকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতেছিল গাজীপুর নগরী। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ চলে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। সকাল থেকেই তরুণ ও নারী ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ভোটগ্রহণ শুরুর আগে কেন্দ্রে-কেন্দ্রে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ লাইন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই সুশৃঙ্খলিতভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছে তারা। তবে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম জটিলতায় ভোটারদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। ভোট নিয়ে কোথাও কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। ভোট দেয়ার পর প্রত্যেক প্রার্থীই নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সকাল ৯টায় ওয়ার্ড ৫৭ নম্বরের টঙ্গী দারুস সালাম মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান। ভোট দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আশা করি জয় নৌকারই হবে। দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গঠনে মানুষের যে প্রত্যয়, তা নৌকার জয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল থেকে মানুষ ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়েছে। ভোটের যে কোনো ফলাফল অবশ্যই মেনে নেব। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। সবসময় জনগণের মতামতের প্রতি আমি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আসছি। আজ জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে, আমি সেটা অবশ্যই মেনে নেব। আমি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সব সময় জনগণের সঙ্গে ছিলাম। এদিকে সকাল ১০টায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ভোট দেয়ার পর তারা দুজনেই ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। জায়েদা খাতুন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। সব ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

অসুস্থ শরীর নিয়ে এসে ভোট দেন পঁচাত্তরোর্ধ ইসকন বেগম। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট দিয়েছেন তিনি। সকাল সাড়ে ৯টায় ওয়ার্ডের ৪০ নম্বর ভোগড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নারী কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন তিনি। এ সময় তার কাছে অসুস্থ শরীরে ভোট দিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ আশা করে, তাই ভোট দিতে আইছি। ইভিএমে ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, সমস্যা হয় নাই।’

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এবার প্রায় ৪১ হাজার নতুন ভোটার। ভোটাধিকার প্রয়োগে তরুণরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে এসেছেন। প্রথম ভোট ইভিএম পদ্ধতিতে তাদের অনেকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ২৬নং ওয়ার্ডের মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা রাশিদা আক্তার বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছি। ৮টা থেকে ভোট শুরু হলে প্রথমেই সুযোগ পেয়ে ইভিএমে ভোট দিতে পেরে আমি খুশি। এক মিনিটেরও কম সময় লেগেছে ভোট দিতে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি। নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মো. হারুন-অর-রশীদ ও সরকার শাহনূর ইসলাম। তবে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়নি। দলটির কয়েকজন স্থানীয় নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ভোট হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশনের।