স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের জয়

গাজীপুরে হোঁচট খেল আওয়ামী লীগ

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ হোঁচট খেল। তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কারণেই ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনেরই আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র।

জানা জায়, সাধারণ গৃহিণী থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই আলোচনায় আসেন ৬১ বছর বয়সি জায়েদা খাতুন। ভোটের প্রচারে নিজেকে জাহাঙ্গীরের মা হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ শেষে গভীর রাতে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায়, জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেছেন। মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ভোটের ফলাফলে তৃতীয় হওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট।

গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম যখন বেসরকারি ফল ঘোষণা করছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন জায়েদা খাতুনের ছেলে ও তার নির্বাচনি প্রচার কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম। বিজয়ের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, মায়েদের জয় হয়েছে গাজীপুরের নির্বাচনে। এ সময় তিনি আরও বলেন, গাজীপুরে নৌকা জিতছে আর ব্যক্তি হেরেছে। আওয়ামী লীগ এবং নৌকার বিরুদ্ধেও কখনো যাননি এবং যাবেনও না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েই মূলত জাহাঙ্গীর তার মা জায়েদা খাতুনকে প্রার্থী করেন। অবশ্য তিনি নিজেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায় তার প্রার্থিতা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত হন তিনি। কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে কার্যত আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাহাঙ্গীর। মায়ের পক্ষে দিন-রাত প্রচার চালিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে আজমত উল্লাও নির্বাচনি প্রচারে যা বলেছেন, এর প্রায় সবই ছিল জাহাঙ্গীরকেন্দ্রিক। ভোটে আজমত উল্লার হেরে যাওয়াকে জাহাঙ্গীরের জয় বলেই উল্লেখ করছেন তার অনুসারীরা।

নৌকার প্রার্থী হেরে যাওয়ার কারণ নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তারা যেসব বিষয় সামনে এনেছেন, তা হচ্ছে মেয়র থাকা অবস্থায় বিভিন্নজনকে দান-অনুদান এবং নানাভাবে আর্থিক সুবিধা দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। এসব কারণে স্থানীয় তরুণদের একটি অংশ সব সময় তার সঙ্গে ছিল। ফলে তার নিজস্ব ভোটব্যাংক গড়ে উঠেছে। আবার আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কার করলেও স্থানীয়ভাবে দলের একটির অংশের সমর্থন ভেতরে ভেতরে তিনি পেয়ে আসছিলেন। তিনিও নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন হিসেবেই সব সময় পরিচয় দিয়েছেন। পাশাপাশি কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের বড় একটি অংশ তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সংসদীয় বিভিন্ন আসনের উপনির্বাচনে এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে ভোটারের খরা দেখা গেছে। তবে গাজীপুর সিটির নির্বাচনে ব্যতিক্রমী চিত্রই দেখা যায়। সকাল থেকে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বেশিরভাগ কেন্দ্রে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর এজেন্ট না থাকলেও অনিয়মের তেমন কোনো অভিযোগ ছিল না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জায়েদা খাতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, এখানে নৌকার জয় হয়েছে, পরাজয় হয়েছে ব্যক্তির। মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি জন্মের পর থেকেই আওয়ামী লীগ করি। আমি এখানকার আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ব্যক্তি। মানুষ আমার মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি ও আমার মা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে একটা সুন্দর শহর গড়ে তুলব।

নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনে মাকে সহযোগিতা করবেন বলে জানান জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে একটি পরিকল্পিত নগরে পরিণত করব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমার মায়ের পাশে ছিলেন। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে নিয়েও কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, যারা এখানে মেয়র নির্বাচন করেছেন। আমার বড় ভাই আজমত উল্লা খান এখানে নির্বাচন করেছেন। আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কারও প্রতি রাগ, ক্ষোভ নাই। আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজটি করতে চাই।