ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংসদ নির্বাচনের আগে আস্থা অর্জনে উত্তীর্ণ ইসি

* অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ খুলল * নির্বাচনে আসতে পারে বিএনপি
সংসদ নির্বাচনের আগে আস্থা অর্জনে উত্তীর্ণ ইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে আস্থা অর্জন করতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে প্রথমে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আস্থা অর্জনে উত্তীর্ণ হয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পথ খুলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, গাজীপুরে ভোটের পর রাজপথের বিরোধীদল বিএনপির অনেক নেতা খুশি। সম্প্রতি বিদেশি চাপে ইসি এমন সুষ্ঠু ভোট করতে পেরেছে বলে তাদের ধারণা। তাই তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে বলেও বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে ইসি তাদের কথা রাখার চেষ্টা করেছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছিলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রেখে ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কঠোর থাকবে ইসি। কেউ অন্যায় করলে ছাড় পাবে না। তাদের সেই বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেছে বৃহস্পতিবারের এই নির্বাচনে।

এছাড়া এই নির্বাচনকে ইসির নিজেরও আস্থা অর্জনের পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। সে কারণে গত হস্পতিবার ভোটের দিন সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে সরাসরি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিল ইসি। দিন শেষে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে কমিশন। জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভোটের পরিবেশ ভালো ছিল। বলা চলে সন্তোষজনক। তবে ইভিএমের কারণে ভোট গ্রহণের গতি ধীর ছিল।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ইসি যে কথা বলেছিল, তা রাখতে তারা সচেষ্ট ছিল। দীর্ঘদিন পর মনে হয়েছে ভোটের পরিবেশ কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে।

জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা পাঁচ সিটি নির্বাচনের প্রথমটি গাজীপুরে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মাকে নিয়ে শুরু থেকে আলোচনা ছিল। কারণ বিএনপি না থাকায় এই স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকেই ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের পাঁচতলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়।

ভোটগ্রহণ শেষ হলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চার নির্বাচন কমিশনার। তাদের দৃষ্টিতে ভোট কেমন হয়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘আপনারাই আগে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন কেমন হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক টিমের কাছ থেকে যে খবর পেয়েছি, সেটি হচ্ছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেসব প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই বলেছেন নির্বাচনব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এই নির্বাচনে যে ফলাফলই আসুক না কেন, তারা সবাই মেনে নেবেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। তবে হিসাব করলে সঠিক তথ্যটা পাওয়া যাবে।

সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য ভিসা না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে যে ভিসানীতি নিয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় নির্বাচন কমিশনার আলমগীরকে। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসির আইন অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। এর সঙ্গে বিদেশিদের কোনো মন্তব্য আমরা নেব না। এটা রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র দেখবে।

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত করায় নগরের বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জায়েদা খাতুন। নির্বাচনে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও শুভেচ্ছা। আমি ওনাকে ধন্যবাদ জানাই। ভোটটা সুষ্ঠু হয়েছে। আমি আমার ভোটের হিসাব পেয়েছি। এজন্য আমি আরো ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে। আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। এর পর চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে জাতীয় সংসদের ভোট করবে ইসি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত