ডলার সংকট ও দাম বৃদ্ধি কমেছে গাড়ি আমদানি

পাঁচ মাসে ১০ হাজারের স্থলে ২৫০০

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

দেশে গেল পাঁচ মাসে ১০ হাজারের স্থলে আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ গাড়ি। ডলার সংকট ও গাড়ির দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি বাড়ছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে বরাবরের মতো জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগেই বেড়েছে গাড়ি আমদানি। বাজেটে রিকন্ডিশন (একবার ব্যবহৃত) গাড়ির ক্ষেত্রে শুল্কহার বাড়তে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছেন আমদানিকারকরা। তাই গাড়ি আমদানি বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদেশ থেকে আমদানি গাড়ির বড় অংশ খালাস হচ্ছে খুলনার মোংলা বন্দরে। চট্টগ্রাম বন্দরে বছরজুড়েই গাড়ির শেড ফাঁকা যাচ্ছে। অন্যদিকে মোংলা বন্দর শেডে ধারণ ক্ষমতার সমান গাড়ি থাকছে দীর্ঘদিন ধরে। আমদানিকারকরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ফ্রি টাইমের পর গাড়ি প্রতি রেন্ট (ভাড়া) গুনতে হয় মোংলা বন্দরের কয়েকগুণ বেশি। তাই আমদানি গাড়ি ভর্তি জাহাজ মোংলা বন্দরেই বেশি খালাস হয়।

বাংলাদেশে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন (বারভিটা) সভাপতি হাবিবল্লাহ ডন আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, গাড়ি আমদানি বাড়েনি বরং কমেছে। প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার গাড়ি আমদানি হওয়ার কথা। এ হিসাবে গেল পাঁচ মাসে গাড়ি আমদানি হওয়ার কথা অন্তত ১০ হাজার। কিন্তু জাপান থেকে আসা দুটি রো রো ভ্যাসেলে আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ গাড়ি। ডলার সংকটের কারণেই কমেছে গাড়ি আমদানি। আরেকটি কারণ ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গাড়ির দামও বেড়েছে। তাই গাড়ি আমদানি কমেছে। বাজেটকে কেন্দ্র করে গাড়ি আমদানি আসলে হয়নি। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মন্দা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্তদেশে ডলারের সংকট ছিল বেশি। এজন্য গাড়ি আমদানির জন্য ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) হার কম ছিল। তবে ডলারের সংকট কিছুটা কেটে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে শুরু করায় গত কয়েক মাসে গাড়ি আমদানি বেড়েছে।

মোংলা বন্দরের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার শামীম হাওলাদার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এই বন্দরে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার গাড়ি রাখা যায়। নির্ধারিত কোনো শেড না থাকলেও বন্দর ইয়ার্ডের খোলা জায়গায় বাড়তি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে। তাই বেশি সংখ্যক গাড়ি খালাস হলেও কোনো সমস্যা নেই।

বন্দর ও কাস্টমস সূত্র জানায়, প্রতি বছরের মতো বাজেট ঘোষণার আগ মুহূর্তে দেশে বেড়েছে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি। চলতি মাসে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে গাড়ি আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৬২৯টি। এর মধ্যে মালয়েশিয়া পতাকাবাহী ‘এমভি মালয়েশিয়া স্টার’ নামে রো রো জাহাজে করে জাপান থেকে নিয়ে আসা হয় ৯২৬টি গাড়ি। গেল ১৯ মে মোংলা বন্দরে জাহাজ থেকে গাড়িগুলো খালাস হয়। এর আগে গত ৪ মে একই রো রো জাহাজে করে আসা ৭০৩টি গাড়ি খালাস হয় মোংলা বন্দরে। দেশে ডলার সংকটের কারণে গাড়ি আমদানি কমলেও আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এবার গাড়ি আমদানি কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

‘এমভি মালয়েশিয়া স্টার’ নামে বাণিজ্যিক জাহাজের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট মেসার্স এনশিয়েন্ট স্টিম শিপ এর এক কর্মকর্তা জানান, ১৯ মে জাপান থেকে আমদানিকৃত গাড়ি নিয়ে রো রো জাহাজটি মোংলা বন্দরে পৌঁছায়। ওই জাহাজে ১ হাজার ৩৭৬টি গাড়ি আসে বাংলাদেশে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয় ৪৫০টি গাড়ি। আর বাকি ৯২৬টি গাড়ি মোংলা বন্দরে খালাস করা হয়েছে। এসব গাড়ি মধ্যে রয়েছে এক্সিও, প্রিমিও, অ্যাকুয়া, প্রাডো ও মিনিবাসসহ একাধিক ব্রান্ডের গাড়ি। আগামী ৩ জুন আরও একটি গাড়ির চালান বাংলাদেশে আসবে। ওই রো রো জাহাজেও একই পরিমাণ গাড়ি থাকতে পারে।

এদিকে বাজেট ঘোষণার পর দাম বাড়বে এই আশঙ্কায় বাজেটের আগে রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। যদিও ব্যবসায়ীরাও বলছেন বিক্রির এই চিত্র সাময়িক। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং এলসি সংকটে গাড়ির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ফলে বছরের বাকি সময়ে স্বাভাবিকের চেয়েও বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশের মতো। এ অবস্থায় দাম সহনীয় রাখতে আসছে বাজেটে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিতে সব রকম সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি করপরিকল্পনা চেয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারক সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে গাড়ি আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয় নিম্নমুখী। তাই রাজস্ব বাড়ানোর জন্য অপ্রয়োজনীয় কিছু শুল্ক কমিয়ে গাড়ির দামে সমন্বয় প্রয়োজন। হাইব্রিড এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতেও দিতে হবে উৎসাহ।

এক জাহাজে ৫০০ কোটি টাকার গাড়ি

প্রায় ৫০০ কোটি টাকার এক হাজার ২৫৬টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি হয়েছে একটি রো রো জাহাজেই। ৩ মে জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে বিশাল এই গাড়ি নিয়ে ‘এমভি মালয়েশিয়া স্টার’ নামে রো রো জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। জাহাজ থেকে ৫৬৯টি প্রাইভেট কার, রেসিং কার, পাজেরো জিপ ও মাইক্রোবাস খালাসের পর বাকি ৭০৬টি গাড়ি নিয়ে মোংলা বন্দরে যায়। সেখানেই খালাস হয় জাহাজগুলো। কাস্টমস সূত্র জানায়, গাড়িগুলো আমদানি খাতে রাজস্ব আয় হবে অন্তত ২০০ কোটি টাকা। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের প্রায় ১৫ জন ব্যবসায়ী এসব গাড়ি আমদানি করেছেন বলে জানা গেছে।