ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদুল আজহা

এবারো দেশি গরুতেই জমে উঠবে পশুর হাট

* ১ কোটি ৫ লাখের বিপরীতে মজুত ১ কোটি ২১ লাখ পশু * সীমান্তে কঠোর অবস্থান
এবারো দেশি গরুতেই জমে উঠবে পশুর হাট

দেশের খামারি ও কৃষকদের কথা ভেবে এবারো দেশের বাইরে থেকে কোরবানির পশু আমদানি করা হচ্ছে না। অপরদিকে দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মিটবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য অনুযায়ী দেশে গত বছর ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছিল। সে হিসাবের সঙ্গে ৫ শতাংশ যুক্ত করে এবার ১ কোটি ৫ লাখ পশু কোরবানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) কর্তারা। তারা বলছেন, বিভিন্ন খামার এবং প্রান্তিক কৃষকেব কাছে আসন্ন কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত গবাদিপশু মজুদ রয়েছে। এই সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখের অধিক। আসন্ন কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৬ লাখ বেশি। এতে করে গত কয়েক বছরের মতো এবারো শতভাগ দেশীয় পশু দিয়ে কোরবানি করা সম্ভব হবে। ফলে কোরবানির জন্য ভারত কিংবা মিয়ানমার থেকে কোনো পশু আমদানি করতে হবে না।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে অবৈধ পথে গরু ও অন্যান্য পশু যাতে না আসতে পারে সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি রাখছেন বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে ভারত ও মিয়ানমারের যেসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে গরু আসার সম্ভাবনা থাকে সেসব সীমান্তে অতিরিক্ত নজরদারি রয়েছে বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন তাদের সমীক্ষার বরাত দিয়ে জানিয়েছেন- দেশে বর্তমানে বিভিন্ন খামারিদের উৎপাদিত এবং গৃহস্তের পালিত গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখের বেশি হবে। আসন্ন কোরবানি ঈদে মোট ১ কোটি ৫ লাখের মতো পশুর চাহিদা থাকতে পারে। কারণ গত বছর ঈদুল আজহায় ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। এ বছর সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। ফলে ১ কোটি ৫ লাখ পশু কোরবানির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বরাবরের মতো এবারো শতভাগ দেশীয় পশু দিয়ে কোরবানি করা সম্ভব হবে।

এদিকে পরিবহন খরচ, পশু খাদ্য এবং অনান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার কোরবানি পশুর দাম গতবছরের তুলনায় ৫ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন বিডিএফএ সভাপতি। তবে এতে কোরবানির কোন সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন তিনি।

অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারও বলেছেন- বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা দেশীয় পশু দিয়ে শতভাগ কোরবানি করা সম্ভব হবে। দেশের বাইরে থেকে কোরবানির জন্য কোন পশু আমদানি করতে হবে না। বরং চাহিদার চেয়ে আরো ২১/২২ লাখ উদ্বৃত্ত থাকবে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের খামারিতে কী পরিমাণ পশু রয়েছে, তার চূড়ান্ত তালিকা কয়েক দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে। তবে আশা করছি, আমাদের পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২২/২৩ লাখ হবে। যেহেতু গত বছর আমাদের ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পশু ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছিল। এবার সারা দেশে হয়ত ১ কোটির চেয়ে কিছু বেশি হবে। তারপরেও আমাদের ২০/২১ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থেকে যাবে।

জানা গেছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের কিছু অসাধু খামারি বেশি লাভের আশায় ও স্থানীয় পশু ডাক্তার ও ফার্মেসির প্ররোচনায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে জন্য বিভিন্ন ট্যাবলেট, পাউডার ও ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকে। এসব ব্যবহার রোধে ভেটেরিনারি ফার্মেসিগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পরিচালনা করা হচ্ছে মোবাইল কোর্ট। পাশাপাশি ফার্মেসিগুলো যাতে এসব পণ্য বিক্রি করতে না পারে সে জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি খামারিরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা অনেককিছু হিসেবে করে পশু লালন-পালন করেন।

জানা গেছে, ২০২২ সালে পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি করা হয়েছে। গত বছর দেশে কোরবানির জন্য সারা দেশের খামারি ও গৃহস্থদের কাছে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত ছিল। ফলে গত বছর ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬২৪টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত ছিল। ২০২১ সালে সারা দেশে কোরবানি হওয়া পশুর পরিমাণ ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। বিপরীতে ২০২১ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিলো ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি।

এর আগে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি মন্দার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে দেশে কোরবানির চাহিদা কমে গিয়েছিল। ২০১৭ সালে দেশে মোট কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৫৬টি, ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ১ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার হাজার ৭০টি। ২০১৯ সালে তা আরও বেড়ে হয় ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ২৮১টি। করোনা অর্থনীতি মন্দার কারণে ২০২০ সাল থেকে কোরবানি দেওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করে। ২০২০ সালে দেশে কোরবানি হয় মাত্র ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু। ২০২১ সালে কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা কমে ৯০ লাখ ৯২ হাজার ২৪২টি নেমে আসে।

গত বছর ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে।

তবে পূর্বে কোরবানির চাহিদা মেটাতে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গরু আমদানি করা হতো। এতে গরুর বাজারে দামে কিছুটা সস্তা পাওয়া যেতে বলে মনে করেন ক্রেতারা। বৈধ আমদানির পাশাপাশি প্রতিবছর কোরবানি ঈদে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গরু আসত ভারত ও মিয়ানমার থেকে। এবার সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে এখন ভারত থেকে গরু আসছে না। গত কয়েক বছর ভারতীয় গরু না থাকায় অনেকটা হতাশ ক্রেতারা। ভারতীয় গরু না আসায় রাজধানীর গাবতলীসহ দেশের বড় বড় হাটে পশুর চড়া দাম লক্ষ্য করা গেছে। এবারও এমনটি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, বৈধ-অবৈধ যে ভাবেই হোক ভারতীয় গরু বেশি আসলে কোরবানির পশু সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে দামও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসত। এমনটি না হওয়ায় বেশি দামেই দেশি গরু কিনে কোরবানি দিতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদুল-আযহায়ও কোরবানির পশুর চাহিদার সম্ভাব্য টার্গেটের তুলনায় অধিক গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। আর মানুষ যাতে ঘরে বসেই পশু ক্রয় করতে পারে তাই এবারও অনলাইনে পশু ক্রয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, একসময় ভারত-মিয়ানমার থেকে পশু না এলে কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকত মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে এগিয়ে চলেছে তার অন্যতম অধ্যায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত