ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সারা দেশে নির্মিত হচ্ছে ১০১টি নান্দনিক পার্ক

সারা দেশে নির্মিত হচ্ছে ১০১টি নান্দনিক পার্ক

সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ১০১টি নান্দনিক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে পার্কগুলোয়। এরই মধ্যে পার্কের জমি খোঁজা ও পার্কের নকশা তৈরির কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব পার্কে সতেজ বাতাস ও মনোরম পরিবেশের স্বাদ মিলবে। দৈনিক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্রাম নিতে ও ঘোরাঘুরি করতে আসতে পারবেন মানুষ। পার্ককে সৌন্দর্যবর্ধনের ও নানা ধরনের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে। আর এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগীয় শহরে পার্ক নির্মাণ’ প্রকল্প। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নথির তথ্য অনুযায়ী, পার্কের জমি খুঁজতে গণপূর্ত অধিদপ্তর সারা দেশে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠির আলোকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ফাঁকা জমির তালিকা এসেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে। এই তালিকায় রয়েছে- ঢাকা ৫টি, চট্টগ্রামে ১২টি, রাজশাহী ১০টি, খুলনা ১৬টি, বরিশাল ১৫টি, সিলেট ৮টি, গোপালগঞ্জ ২টি, রংপুর ৫টি ও ময়মনসিংহের ১০টি স্থানে পার্ক নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া গেছে। সারা দেশে জেলা-উপজেলা শহরে ১০১টি স্থানে জমি নির্ধারণ করে পার্ক তৈরি করা হবে।

জমির তালিকায় চট্টগ্রাম জোনের সার্কেল-১ বায়েজিদ পার্ক সংলগ্ন এলাকায় ৩ দশমিক ২ একর জমি পাওয়া গেছে। পার্কটি সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে জমির পূর্বদিকে গণপূর্তের ই/এম কারখানা উপ-বিভাগের টিনশেড অফিস আছে। এই জমির মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর। এখানে তিন ফুট মাটি ভরাট করতে হবে। চট্টগ্রামের সার্কেল-২ এ টাইগার পাসে আনুমানিক ২৫০ একর জমি রয়েছে। যার মালিকানা গণপূর্ত অধিদপ্তর। বর্তমানে এই জমিতে কিছু টিনশেড এবং ১টি ঝুঁকিপূর্ণ ৩ তলা ভবন রয়েছে। রাজশাহী মোল্লাপাড়া ও আলীগঞ্জ মৌজায় ১৬ দশমিক ৮৪ একর জমি রয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে একটি স্কুল ও একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়েছে। যশোর মেহেরপুর সদর উপজেলাস্থ আমঝুপি ইউনিয়নে ৫৪ দশমিক ১৫ একর জমি রয়েছে। মাগুরা সদর উপজেলার সিরিজদিয়া বাঁওড় এলাকায় ১০৩ দশমিক ১৩ একর খাস জমি রয়েছে। যেখানে কোনো স্থাপনা নেই। গোপালগঞ্জের তেঘরিয়া ১০ একর খাসজমি পাওয়া গেছে। যেখানে ১৫ ফুট মাটি ভরাট করতে হবে।

প্রকল্পের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি পতিত এবং অব্যবহৃত জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে। পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত হবে। বয়োবৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জন্য ব্যায়াম, হাঁটা এবং শারীরিক কসরতের উপযুক্ত এবং যথোপযোগী স্থান করা হবে। পার্কের চারপাশে গাছ লাগানো হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের জমি দখল করে বসতি গড়ে তুলেছে কিছু চক্র। এসব চক্র জমি দখলের পর স্থাপনা নির্মাণ করা হয়, যা পরবর্তীতে জমি উদ্ধারে বেগ পেতে হয় গণপূর্তকে। এসব ফাঁকা জমিতে পার্ক নির্মাণ করা হলে মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবেন।

এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সারা দেশের জেলা-উপজেলায় পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ওই এলাকায় সৌন্দর্য বাড়বে। পার্কে বয়স্কদের শরীর চর্চা, বসার স্থান ও শিশুদের খেলার জায়গা রাখা হবে। শহরের পার্কগুলোর মতো আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে জেলা-উপজেলা পার্কে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দেশেও বিভিন্ন প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। তবে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সবুজায়নের ক্ষেত্রে পার্কগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ পার্কের ভেতরে ঘাস ও বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগানো হবে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, পার্কের জায়গা খুঁজতে গণপূর্তের সব সার্কেলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরইমধ্য বেশকিছু জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পার্কের জন্য জমির খোঁজ মিলেছে। আর যেসব জেলা-উপজেলায় গণপূর্তের নিজস্ব জমি নেই, সেখানে জেলা প্রশাসকদের পরামর্শে খাস জমিতে পার্ক তৈরি করা হবে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে পার্ক করা হয়েছে, ঠিক সেই আদলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পার্কগুলো নির্মাণ করা হবে। এখানে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে অনেক মানুষ রৌদ্রে চলাচল করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, কিন্তু বসার মতো ফাঁকা জায়গা পান না। পার্কগুলো করা হলে মানুষ প্রশান্তির জন্য একটু হলেও বসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা লাগানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।

গণপূর্ত প্রকল্প সার্কেল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহমিদা বারী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সারা দেশে পার্কের জমি খুঁজতে গণপূর্তের সব নির্বাহী প্রকৌশলীদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কিছু জমির তালিকা গণপূর্ত অধিদপ্তরে এসেছে। এসব জমি বাছাই শেষে প্রথম পর্যায়ে পার্ক নির্মাণ করা হবে। আর যেসব জমি নিয়ে মামলা রয়েছে কিংবা জমির পরিমাণ কম, সেসব স্থানে প্রথমধাপে পার্ক নির্মাণ করা হবে না।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির চাকা ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আর্থিক ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধার জন্য মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে ছুটছেন। এতে শহরে মানুষের চাপ বাড়ছে। বিনোদন কেন্দ্র মাঠ ও পার্কে উপচেপড়া ভীড় দেখা যাচ্ছে। তবে শহরমুখী মানুষের স্রোত কমাতে জেলা-উপজেলায় ১০১টি পার্ক নির্মাণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। শুধু ১০১টি পার্ক নয়, আরো বেশি পার্ক ও মাঠ নির্মাণ করা দরকার রয়েছে।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সবুজায়নের ক্ষেত্রে ১০১টি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেছেন, বহু আগেই এমন পরিকল্পনার দরকার ছিল। কারণ দিনে দিনে জমির দাম বাড়ছে। এ সুযোগে একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল খাস জমি দখল করছে। বিভিন্ন সময়ে এসব জমি দখলমুক্ত করা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। সেজন্য খাস জমিতে পার্ক নির্মাণ করা ভালো।

ড. আদিল মুহাম্মদ খান আরো বলেন, বেসরকারিভাবে সব জেলা-উপজেলায় পার্ক নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সেজন্য সরকারিভাবে পার্ক নির্মাণ করতে হবে। সরকার যোগাযোগ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, পার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।

‘আমার গ্রাম, আমার শহর’- সরকারের এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজধানী ঢাকার মতো সারা দেশে ১০১টি বিনোদন কেন্দ্রের জন্য পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এই উদ্যোগের পেছনে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবের ভূমিকা রয়েছে।

জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ সময়ে ‘আমার গ্রাম, আমার শহরে’র উদ্যোগ নেয়া হয়। ‘আমার গ্রাম, আমার শহরে’র অর্থ হলো গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া। দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গঠন এবং নাগরিক জীবনযাপনে বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ গ্রামের মানুষকে অবহেলিত রেখে উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। সামনে শহরে বাস করা মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে। এটা শুধু বাংলাদেশের চিত্র নয়, বিশ্বব্যাপীই এমন চিত্র দেখা যাবে। রাজধানী ঢাকা ও বেশ কয়েকটি শহর উন্নয়ন করে অতিরিক্ত মানুষের বাসযোগ্য রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। সেজন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উন্নয়নে পার্ক নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সারা দেশে জেলা-উপজেলা শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো গড়ে উঠবে। শিশু, নারী, পুরুষ ও বয়স্কদের সব সুবিধা থাকবে পার্কে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত