ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গতিহীন বিএনপির আন্দোলন

গতিহীন বিএনপির আন্দোলন

বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১০ দফা দাবিতে চলছে যুগপৎ নানা কর্মসূচি। তবে প্রায় সাড়ে ৫ মাস ধরে ঢিমেতালে চলা এসব কর্মসূচিতে অনেকটাই গতিহীন সেই চূড়ান্ত আন্দোলন।

গত রোববার ঢাকা ছাড়া সারা দেশে মহানগর পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। এ অবস্থায় আগামী আরো কয়েক সপ্তাহ বিভাগীয় পর্যায়ে ‘তরুণ সমাবেশ’সহ কিছু কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নিচ্ছে দলটি। তবে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের পাল্টা শক্ত অবস্থানের কারণে বিএনপির এসব কর্মসূচির সফলতা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া নতুন মার্কিন ভিসানীতি বিএনপির আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

এদিকে গতকাল থেকে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘৪২তম শাহাদৎ বার্ষিকী’ উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। চলবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত। তাই আপাতত নমনীয় এসব কর্মসূচিতেই ব্যস্ত থাকবেন নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপির চলমান আন্দোলনকে দ্রুত এক দফায় রূপ দিতে প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। যদিও ঈদুল আজহার আগে সেই রূপ দেখার সম্ভাবনা কম বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এখন বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণ গ্রেপ্তার করছে।

জানা গেছে, সরকার পতনের একদফার আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য নেতারা দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানালেও কবে থেকে সেই আন্দোলন হবে, তার কোনো দিনক্ষণ এখনও জানেন না কেউ। তবে একদফার আন্দোলনের পরিকল্পনা ও নানা প্রস্তুতি চলছে বলে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে।

সূত্র মতে, চলমান ১০ দফা দাবিকে দ্রুত সরকার পতনের এক দফায় রূপ দিতে চায় বিএনপি। এজন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সব জেলা ও মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। এছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় বিএনপিনেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা সমন্বয় বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠক থেকে সবাইকে দ্রুত এক দফার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেন, চলমান কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতির অংশ। দলের নেতারা মনে করেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চলা কর্মসূচিতে আন্দোলনের গতি বেড়েছে। মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাঠে নতুনভাবে উদ্দীপনা পেয়েছেন। রাজপথের এই গতি এক দফার আন্দোলন সফল করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের জন্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ লেবার পার্টির সাথে বৈঠক করেছে বিএনপি। নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সমন্বকারী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে। স্থায়ী কমিটির অনুমোদনের পর সুবিধাজনক সময়ে তা ঘোষণা করা হবে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারকে বিদায় করতে যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে কর্মসূচি দেয়া হবে। সরকারের বিদায়ের সেই আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত হচ্ছেন।

এদিকে মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হবেন বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তাদের মতে, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা-হামলাসহ পুলিশের ‘আগ্রাসী ভাব’ও কমে আসবে। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে দ্রুত কর্মসূচি দেয়া উচিত বলে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে মত এসেছে।

তবে উল্টো আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এবং সেই দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সম্ভাবনা আর থাকল না। কেন না, বিএনপির পক্ষে এখন এই ভিসা নীতি সামনে রেখে নির্বাচন বর্জন করা, প্রতিহত করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার অবস্থানে অটল থাকার আর কোনো সুযোগ নেই। আমি মনে করি, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবির পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অবশ্য বিএনপি যদি মার্কিন ভিসা নীতি উপেক্ষা করে পথ চলতে চায়, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সেটা অত্যন্ত কঠিন হবে বিএনপির জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত