ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিধিনিষেধ উপেক্ষিত

চোখ রাঙাচ্ছে করোনা

চোখ রাঙাচ্ছে করোনা

রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় আবারো চোখ রাঙাছে করোনাভাইরাস। গত কয়েকদিনে করোনা রোগী শনাক্তে রেকর্ড হয়েছে। এরই জেরে আবারো করোনাভাইরাস রোধে মানুষকে সতর্ক থাকা এবং লোকসমাগমে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কাগজপত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও বাস্তবে জনসাধারণ এ সবের থোড়াই কেয়ার করছেন। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও। নির্দেশনা মানাতে প্রশাসনেরও নেই তেমন কোনো তৎপরতা। যদিও বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, এখনই সতর্ক না হলে সামনে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করতে পারে। রাজধানীর দোকানগুলোতে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। মাস্ক পরায় চরম অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। বিপণিবিতান ও মার্কেটেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। ভেতরে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ছাড়াই কেনাবেচার কাজ সারছেন। নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে কাপড়ের জমজমাট বাজার জমে। ক্রেতার ভিড়ে সড়কে যানজট লেগে যায়। জনসমাগমের মধ্যে মানুষের মুখে মাস্ক পরতে দেখা যায়নি।

করোনাভাইরাস নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০৮ জন ঢাকা মহানগর, একজন নারায়ণগঞ্জ, একজন জামালপুর, একজন রাজশাহী, একজন রংপুরের ও দুইজন সিলেট জেলার বাসিন্দা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এ সময় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে থেকে সেরে উঠেছেন ১৬ জন। এ পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৪ জনে। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৪৬ জন।

গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ৮৮৫টি পরীক্ষাগারে ১৮২৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৮২৬টি। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৬২৪৯ জনে। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

গতকালের তুলনায় গত সোমবার করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, দেশে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তবে এ সময় কেউ মারা যায়নি। প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয় ২১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত কাজ করছে। গত সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই সম্মেলনে দেশের সব মানুষকে সতর্ক থাকতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্প্রতি বাড়লেও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা নেই। দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। অন্যদিকে সব বিধিনিষেধও উঠে গেছে। নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি জেনেভা থেকে এসেছি। সেখানে দেখলাম, একটি মানুষও মাস্ক পরেনি। সেখানে যে দুয়েকটি রোগী পাওয়া যাচ্ছে না- তা নয়। আমাদের এখানেও দুয়েকটি করে রোগী পাচ্ছি। ইদানীং কিছু বেড়েছে। কিন্তু হাসপাতালে তেমন রোগী নেই। যেহেতু সবাই টিকা নিয়েছে সেজন্য করোনা মারাত্মক আকার ধারণ করছে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলব, করোনা যেহেতু আছে আমাদের সতর্ক থাকা ভালো। যেখানে বেশি লোকের সমাগম সেখানে মাস্ক পরতে পারলে ভালো হয়। করোনা মোকাবিলার জন্য যে অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করেছি সেগুলো মনে রাখা উচিত। যে কোনো সময় করোনা অতিরিক্ত বাড়তেও পারে। এখন সেরকম কোনো শঙ্কা নেই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উন্মুক্ত জনসমাগম স্থানে মাস্ক পরতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়স্ক ও জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য মাস্ক ব্যবহার জরুরি।

দেশে করোনা রোগীর বাড়লেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) করোনাভাইরাস নিয়ে সব ধরনের বিধিনিষেধ বাতিল করেছে। এই বিধিনিষেধ বাতিল করায় যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা কিংবা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখতে হবে না। গত ২৫ মে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে বেবিচক। তবে এর আগে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসতে করোনাভাইরাস সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইনের হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হতো যাত্রীদের। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রেও করোনা পরীক্ষার কিংবা ভ্যাকসিন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা নেই। যাত্রী যে দেশে যাবেন, সে দেশের নির্দেশনা অনুসরণ করবেন।

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় দেড় মাস পর ফের করোনা টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ ফাইজার ভ্যারিয়েন্ট কনটেইনিং ভ্যাকসিন (ভিসিভি) কার্যক্রম সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ থেকে সারা দেশে আবারো শুরু হচ্ছে করোনা টিকার তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজের কার্যক্রম। দেয়া হবে ফাইজারের ভ্যারিয়েন্ট কনটেইনিং টিকা। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী গত ২৫ মে এ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে এ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী প্রদান নিশ্চিতকল্পে নিম্নবর্ণিত অবশ্য পালনীয় নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

যারা নিতে পারবে তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ টিকা: ১৮ বছর বয়স থেকে ঊর্ধ্বে সব জনগোষ্ঠী দ্বিতীয় ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানের কমপক্ষে ৪ মাস তৃতীয় ডোজ (বুস্টার) ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে। তৃতীয় ডোজ প্রদানের কমপক্ষে ৪ মাস পর চতুর্থ ডোজ (বুস্টার) ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।

চতুর্থ ডোজ (বুস্টার) ভ্যাকসিন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ৬০ বছর বা ঊর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর বয়সি জনগোষ্ঠী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী (ইম্যুনোকম্প্রোমাইজ), গর্ভবর্তী মা এবং ফ্রন্ট লাইনারদের ভিসিডি ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।

হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন ধরন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের দেশেও করোনা রোগী নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে। করোনার নতুন ধরন সম্পর্কে আমাদের পূর্ণাঙ্গ ধারনা থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, করোনা সংক্রমণের নতুন ধরনকে এই মুহূর্তে চতুর্থ ঢেউ বলা যাবে না। করোনার সংক্রমণ রোধ বর্তমান টিকা নিয়েও কাজ করা দরকার। করোনার নতুন ধরন ঠেকাতে টিকা কার্যকর কি না, ভিন্ন ভিন্ন ধরন মোকাবিলা করতে সক্ষম কি না, সেটি আগে নিশ্চিত হতে হবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, জুনে করোনা সংক্রমণ তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে চীনা কর্তৃপক্ষ। করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট এক্সবিবি শক্তিশালী হয়ে ওঠায় নতুন ভ্যাকসিন তৈরিতে তাড়াহুড়ো করছে চীন সরকার। বলা হচ্ছে, জুনের প্রতি সপ্তাহে চীনে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। গত সোমবার নেতৃস্থানীয় চীনা মহামারি বিশেষজ্ঞ ঝং নানশান বলেন, এক্সবিবি ওমিক্রন সাবভেরিয়েন্টের জন্য দুটি নতুন টিকা অনুমোদন পেয়েছে। আরো তিন থেকে চারটি ভ্যাকসিন শিগগিরই অনুমোদন পাবে।

চীনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এখনকার প্রাদুর্ভাবে ভয়াবহতা কম হবে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বিপুল বয়স্ক মানুষের মৃত্যুহার কমাতে চাইলে জোরালো টিকাদান কর্মসূচির পাশাপাশি হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত