জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কঠোর অবস্থানে পুলিশ

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচএম ফারুক

রাজধানীতে বৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা হালনাগাদ করছে পুলিশ। একইসঙ্গে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের দোকানে যেসব অস্ত্র ও গুলি রয়েছে, তা আমদানির কাগজপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও অস্ত্র ও গুলি কাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নির্দেশনায় পুলিশ এ বিষয়ে মাঠে নেমেছে। ডিএমপির ঢাকার ৮টি ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনারদের (ডিসি) এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির সর্বশেষ ক্রাইম কনফারেন্সেও বৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে বৈধ অস্ত্র দিয়ে কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড করতে না পারে, সেজন্য আগে থেকেই অস্ত্র ও গুলির হিসাব ও অস্ত্রধারীদের তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।

ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অস্ত্র ও গুলি আমদানি এবং কি কি অস্ত্র থাকার কথা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসিদের ইনভয়েসের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখতে হবে। কার কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি আমদানি করা হয় এবং কার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, সেসব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। জেলা প্রশাসন থেকে তালিকা সংগ্রহ করে এবং যেসব বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারী ব্যবহারকারীরা ডিএমপির বিভিন্ন থানায় জিডির মাধ্যমে তথ্য দিয়েছেন, তা যাচাই-বাছাই করে ডিএমপিতে কত সংখ্যক বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সধারী অস্ত্র ও গুলি আছে, তার তথ্য সংগ্রহ করে জেসি (যুগ্ম কমিশনার) ক্রাইম বরাবর প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, এ পর্যন্ত ডিএমপিতে কতগুলো অস্ত্রের লাইন্সে দেয়া হয়েছে, তার সংখ্যার বিষয়ে ক্রাইম বিভাগের সব ডিসি তালিকা প্রস্তুত করবেন। ঢাকার বাইরে জেলা পুলিশ সুপারদের কাছ থেকে কতগুলো বৈধ লাইসেন্সধারী অস্ত্র ডিএমপি এলাকায় আছে, তার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া গান চেকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রদত্ত ছক অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট তথ্য সম্বলিত রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে তার অস্ত্র-গুলি ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে কি না, তা থানাগুলোর ওসিরা যাচাই-বাছাই করবেন।

ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে বৈধ অস্ত্রধারীদের অস্ত্র ভাড়ায় দেয়া বা বৈধ অস্ত্র দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এই প্রবণতা আরো বাড়তে পারে। এজন্য বৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা হালনাগাদ করে যাতে তাদের নজরদারি করা যায়, এজন্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা জানান, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই বৈধ অস্ত্র বিক্রির পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র বা অনুমোদনহীন অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। গত বছরের শুরুতে ঢাকায় আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনায় গুলি সরবরাহ করেছিলেন একজন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী। পুরানা পল্টনের আর্মস মিউজিয়াম নামে একটি বৈধ অস্ত্রের দোকানের মালিক ইমরান হোসেন জিতু ওই জোড়া খুনে ব্যবহৃত গুলি সরবরাহ করেছিলেন। ওই মামলায় জিতু গ্রেপ্তার হয়ে এখনো কারাবন্দি রয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা অনেক বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় গুলি কিনেছেন। বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার আড়ালে অবৈধ গুলি সংগ্রহ করে বিক্রি করেন।

তবে তালিকা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, এটা মহানগর পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। সে হিসেবে এটা করা হচ্ছে। যাদের কাছে বৈধ অস্ত্র ও গুলি রয়েছে, তাদের তালিকাটা হালনাগাদ করা হচ্ছে। এর পেছনে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নেই।