ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

সরকারের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ সম্ভব হয়েছে

সরকারের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ সম্ভব হয়েছে

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যরোধ এবং নিরীহ মানুষকে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যরোধ করা সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের শুরুর দিন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। টেবিলে উত্থাপতি প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব উত্তর দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যরোধ এবং নিরীহ মানুষকে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী/ সিনিয়র সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর সভাপতিত্বে নিয়মিত সভ্য আয়োজন করা হয়। ওই সভাসমূহে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, চাহিদা নিরূপণ, স্থানীয় উৎপাদন, মজুত পরিস্থিতি, আমদানির পরিমাণ ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়ে থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির বাধাসমূহ দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে এলসি খোলার সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখা (মার্জিন) বিষয়ক বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদান করে ব্যাংক ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে মার্জিন নির্ধারণ করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির বাধাসমূহ দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে এলসি খোলার সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখা (মার্জিন) বিষয়ক বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদান করে ব্যাংক ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে মার্জিন নির্ধারণ করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রয়োজন মোতাবেক কোনো কোনো পণ্যের মূল্য (যেমন- ভোজ্যতেল ও চিনি) সমন্বয় করা হয়ে থাকে; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত বাজার মনিটরিং টিম ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজার নিয়মিত পরিদর্শন করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য, মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং কোনোরূপ অস্বাভাবিক অবস্থা/পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকাসহ সকল মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং অভিযান পরিচালনা করে; সারা দেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলায় গঠিত জেলা/উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি মাসিক সভা করে থাকে। ওই টাস্কফোর্স কমিটি জেলা ও উপজেলার বাজারসমূহে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাজারে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজস, মনোপলি, ওলিগোপলি অবস্থা জোটবদ্ধতা অথবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ এবং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বজায় রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন কর্তৃক সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় তথ্য সংগ্রহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় এবং প্রয়োজনে মামলা দায়েরসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করার লক্ষ্যে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য (সারা দেশে পরিবার প্রতি ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি চিনি ও ১ কেজি ছোলা এবং শুধু ঢাকা মহানগরীতে অতিরিক্ত ১ কেজি খেজুর) বিক্রয় কার্যক্রমের প্রথম পর্ব পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে গত ৯ মার্চ হতে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্ব ৩ এপ্রিল, শুরু হয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান ছিল। দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চালের বাজারদর নিগ্রহ স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য প্রাপ্তি সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সুলভমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৩.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন ওএমএস-এর সংস্থান থাকলেও সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ৫.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। পৌরসভা ও শহরাঞ্চলের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও ওএমএস কার্যক্রমকে বিস্তৃত করা হয়েছে। ওএমএস কর্মসূচিতে সারা দেশে সর্বমোট ২,৪১৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮২টি কেন্দ্রে শুধু চাল, ৯৩৫টি কেন্দ্রে চাল ও আটা এবং ২টি কেন্দ্রে শুধু আটা বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে; বর্তমানে ওএমএস কার্যক্রমে দৈনিক মোট ২,৮৩৫ মে.টন চাল এবং ১,০৫০ মে.টন আটা বিক্রয় করা হচ্ছে : এ সব বিক্রয় কেন্দ্রে ৩০/- টাকা কেজি দরে মাথাপিছু সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে চাল ও ২৪/- টাকা কেজি দরে ৫ কেজি আটা দেয়া হচ্ছে।

নায়ক ফারুকের উপর সংসদে শোক প্রস্তাব : প্রয়াত সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধাা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে। তিনি ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত ১৫ মে তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাবটি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উপস্থাপন করেন। এরপর শোক প্রস্তাবের উপর সংসদ সদ্যস্যদের আলোচনা শুরু হয়।

এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বর্ষিয়ান রাজনৈতিক নেতা ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব আনা হয়।

স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করতে নায়ক ফারুক বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন : বঙ্গবন্ধুর নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা ও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করতে নায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধিবেশনে সদ্য প্রয়াত আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের উপর আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করেছেন তিনি। অত্যন্ত অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে অবদান রেখে গেছেন। দুঃখের বিষয় আমরা একে একে সব মুক্তিযোদ্ধাকে হারিফে ফেলছি। তিনি শুধু রাজনীতিই করেননি সাংস্কৃতিক জগতেও অবদান রেখেছেন, চলচিত্র জগতে অবদান রেখেছেন। আমরা তাকে জাতীয় সম্মাননায় ভূষিত করি। আমাদের সংস্কৃতির সেবায় তার মৃত্যু এখানেও আমাদের বিরাট ক্ষতি। সাংস্কৃতিক কর্মীরা সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের পাশে থেকেছে এবং প্রত্যেকটা আন্দোলন সংগ্রামে সাহস যুগিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর তাঁর নামটি মুছে ফেলা হচ্ছিল। নামটি নিতেই চাচ্ছিল না। তখন সাংস্কৃতিক কর্মীরাই এগিয়ে এসেছিল। বঙ্গবন্ধুর নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা, মুক্তিযুদ্ধে গানগুলোকে সামনে নিয়ে আসা, আবার সেই স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করার বলিষ্ঠ ভূমিকা তিনি রেখেছেন। তার অনেক অবদান এদেশের জন্য রয়েছে। আজকে খুব কষ্ঠ লাগছে যে তিনি এভাবে চলে গেলেন। আসলে জন্মালে তো মরতেই হবে এটাই তো বাস্তব কথা।

এ শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় আরও অংশ নেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আসাদুজ্জামান নুর, মেহের আফরোজ চুমকি, হাবিব হাসান, বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত