সংসদ অধিবেশন শুরু

নির্বাচনি বাজেট পেশ আজ

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন ও একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল ৫টায় এ অধিবেশন শুরু হয়। এর আগে বিকাল ৪টায় কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক বসে। সেখানে স্পিকারের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বাজেট উপস্থাপন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও অধিবেশনের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়।

এই অধিবেশনে আজ বিকাল তিন ঘটিকায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যা আগামী এবং ২৬ জুন বাজেট পাস করা হবে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানানো হয়েছে। টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের এটি শেষ বাজেট অধিবেশন। এটিকে নির্বাচনি বাজেট বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন। প্রতি বছর ৩০ জুন বাজেট পাসের রীতি থাকলেও এবারে ঈদুল আজহার কারণে আগামী ২৬ জুন সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখার লক্ষ্যে সম্ভাব্য বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট। সরকার এ সময় আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্যে রয়েছে, যেখানে প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। আগামী বছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হবে জিডিপির ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাজেট পাসের পরে আগামী ১ জুলাই থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট কার্যকর হবে। এটি হবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পঞ্চম ও শেষ বাজেট। বাজেট অধিবেশন উপলক্ষ্যে এবারো এমপি, মন্ত্রী, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। বাজেটের এই ব্যয় মেটাতে মোট কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৬৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বেশি।

রাজস্ব আদায়ের টার্গেট: অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যয় চালাতে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া সরকারের আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। কর রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক চলতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের ঘরে রাখা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ (অনুদানসহ) ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ বাবদ পাওয়া যাবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সরকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেবে ১ লাখ ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি : নতুন বছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সরকার যেভাবেই হোক আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লাগাম ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যেই টেনে রাখতে চায়। নতুন অর্থবছরের জিডিপি হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন অর্থবছর মোট জিডিপির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটের মূল শিরোনাম হচ্ছে ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ উপরে হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। বর্তমানে নানা ধরনের সংকটের মধ্যেও স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১-এর স্বপ্ন দেখাবেন অর্থমন্ত্রী। উচ্চপ্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপি। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

বৈদেশিক ঋণ: চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক ঋণ আগামী অর্থবছরে নেয়া হবে। আর ঋণগ্রস্ত বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি টাকা গুনতে হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এছাড়া বাড়ছে সরকারের মূলধনি ব্যয়ও। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া হচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।

আয়ের লক্ষ্য: আগামী অর্থবছরে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ আয়ের প্রধান উৎস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। এছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি (এনবিআর) আদায়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বৈদেশিক অনুদান সরকারকে পরিশোধ করতে হবে।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য যারা: সংসদ অধিবেশনের প্রথমেই স্পিকার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। এরা হলেন- এমপি আ স ম ফিরোজ, তানভীর শাকিল জয়, প্রাণ গোপাল দত্ত, রুস্তম আলী ফরাজী ও আনজুম সুলতানা। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে ক্রমঅনুযায়ী এরাই সংসদে সভাপতিত্ব করবেন। এর পরে কিংবদন্তী নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন ফারুকের (ঢাকা-১৭ আসনের) মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার।