ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরমে স্কুল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে

* শিক্ষক-অভিভাবকসহ অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে * বিশেষ ছুটি অথবা ক্লাস সময় কমানোর দাবি * কষ্টকর ড্রেস কোড ও অন্যান্য নিয়ম শিথিলের পরামর্শ
গরমে স্কুল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে

বেশ কিছুদিন ধরে দেশে তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। আরও কিছুদিন এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দেশের স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসি বা ফ্যানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার পাশাপাশি বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বেশি হচ্ছে।

এছাড়া ড্রেসকোড মেনে জুতা-মোজা ও ফুলহাতার জামা পরা, গরমে ক্লাস শুরুর আগে পিটিতে অংশগ্রহণের কারণেও কষ্ট বাড়ছে। গরম আবহাওয়ার মধ্যেও জাতীয় পর্যায়ে ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া কার্যক্রমে অংশ নিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও গরমে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গরমের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ ছুটি অথবা ক্লাস কার্যক্রমের সময় কমিয়ে আনার পাশাপাশি কষ্টকর ড্রেসকোড ও অন্যান্য নিয়ম শিথিলের দাবি উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন অভিভাবকরা।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর প্রথম সারির একটি স্কুলের একজন অভিভাবক সাইফুল আলম বলেন, সারা দেশে তাপদাহ চলমান থাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ছুটি দেয়া উচিত। কারণ ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে প্রভাতী ও দিবা-সবশাখার শিক্ষার্থীদেরই গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে। জুতা-মোজাসহ স্কুল ড্রেস পরে বিভিন্ন স্থানের বাসা থেকে যানবাহনে বা হেটে স্কুলে প্রবেশের আগেই ঘেমে অস্থির হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। পরে শিডিউল অনুযায়ী পিটি পর্বে অংশগ্রহণ শেষে ভারি ব্যাগ নিয়ে বহুতল ভবনের সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসে পৌঁছাতে তাদের চরম কষ্টের শিকার হতে হয়। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে এসির ব্যবস্থা থাকলেও রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ফ্যান সুবিধাও নেই। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক আলো-বাতাসও পৌঁছায় না। আবার কোনো কোনো স্কুলের ক্লাসে জানালায় পর্দা না থাকায় সূর্যের তাপে বসেই ক্লাস করতে হয়। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, কিছুদিন পরই স্কুলগুলোতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। তাই কষ্ট উপেক্ষা করেই ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া অনুপস্থিতির জন্য জরিমানার আতঙ্কও আছে। এতে শিক্ষার্থীদের অনেকেই সর্দি, জ্বর, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর শিক্ষার্থীদের আনা-নেয়ার কাজে জড়িত অভিভাবকদেরও একই অবস্থা হচ্ছে।

মিরপুর এলাকার একজন অভিভাবক জানান, গরমে আমরাই বাসায় টিকতে পারি না, বাচ্চারা স্কুলে কি করে টিকবে, কারেন্ট থাকে না ঠিকমতো। আমার ছেলে গতকাল (বৃহস্পতিবার) অসুস্থ হয়ে স্কুলের মেডিকেলে পড়ে ছিল। তিনি বলেন, অনেক বাচ্চা পর্যাপ্ত পানি পান করে না। শরীর থেকে পচুর ঘাম বের হয়ে তাদের পানি শূন্যতা হচ্ছে।

আরেক অভিভাবক জানান, আমার মেয়ে গত বুধবার থেকে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে বিছানায়। এমন অসহনীয় গরমের এই পরিস্থিতিতে চলমান সিটি পরীক্ষা এবং আগত হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় কীভাবে অ্যাটেন্ড করবে, সেটা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।

নাছরিন সুলতানা রিক্তা নামের একজন অভিভাবক বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি, তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও বাচ্চাদের পিটি করানোর মতো সিদ্ধান্ত শিক্ষকরা কি করে নেন! আমার বাচ্চা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। দুপুর ১২টায় বাচ্চাকে পিটিতে দাঁড়াতে শুনলে একজন মায়ের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে, একবার ভাবুন।

যদিও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানান, সরকার নির্ধারিত নিয়ম-কানুন এবং নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করা একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী স্কুলগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। তাই কেউ চাইলেই ইচ্ছামতো ছুটি বা নিয়ম-কানুন শিথিল করতে পারে না। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে তীব্র গরম মৌসুমেও জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে নানা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন জানান, প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩ বিতরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং বিষয়ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে।

সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং পরের দিন ঢাকা পিটিআইতে সাংস্কৃতিক ও বিষয়ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

এ আয়োজনের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। সভাপতিত্ব করবেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের মাধ্যমে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে এ প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত