ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাংবাদিকদের তথ্যমন্ত্রী 

এবারের বাজেট গণমুখী সমালোচনা গৎবাঁধা

এবারের বাজেট গণমুখী সমালোচনা গৎবাঁধা

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য গত বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী ও গরিববান্ধব বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একইসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেটের সমালোচকদের সমালোচনা বরাবরের মতোই গৎবাঁধা ও গতানুগতিক। অনেকে বাজেট ভালোভাবে না দেখেই তাড়াহুড়া করে সমালোচনায় ব্যস্ত।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।

ড. হাছান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫তম বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০তম এই বাজেট ২০০৮-০৯ সালের তুলনায় প্রায় নয়গুণ বড় এবং পিপিপিতে (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) ২০০৯ সালের একশ বিলিয়ন ডলার জিডিপির তুলনায় এখনকার জিডিপি এক ট্রিলিয়ন প্লাস ডলার, অর্থাৎ প্রায় দশগুণ বড়, যা নিঃসন্দেহে দেশের অগ্রগতি সমৃদ্ধির পরিচায়ক।

বিশ্বময় মন্দা, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকটের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শৈথিল্য আসায় বাজেট প্রণয়ন বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো তারপরও এবারের বাজেট গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ হাজার কোটি টাকা বেশি, বলেন তথ্যমন্ত্রী। প্রস্তাবিত এ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বাজেটের ১৬.১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনার এবং এ খাতে বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এই বাজেটের সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এই অর্থ বছরেই প্রথম সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। কোনো রাজনৈতিক দল এ ধরনের সার্বজনীন পেনশন চালুর প্রস্তাব দেয়নি। আপনারা বিএনপির দাবি-দাওয়া জানেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য, তার ও তারেক জিয়ার শাস্তি-মুক্তির বাইরে জনমানুষ নিয়ে তাদের কোনো দাবি থাকে না।

১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের যে কেউ দশ বছরের জন্য চাঁদা দিয়ে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চাশের বেশি বয়স হলেও দশ বছর চাঁদা দিয়ে পেনশনের সুযোগও রয়েছে।

আয়কর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের কর ও জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। গত ১৪ বছরে দেশের জিডিপি প্রায় দশগুণ, বাজেট প্রায় নয়গুণ বৃদ্ধি পেলেও আয়কর দেয়ার হার বেড়েছে মাত্র ৩ গুণ। ২০০৯ সালে ১১ লাখ মানুষ আয়কর দিত, গত বছর ২৯ লাখ মানুষ আয়কর দিয়েছে। অথচ দেশে অন্তত ২ কোটি মানুষ আয়কর দিতে সক্ষম। কিন্তু মানুষ কর দেয় না। তাই করের আওতা বাড়ানো অযৌক্তিক নয়।

‘আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে এ বাজেট লুটপাটের’- বিএনপির এমন সমালোচনা খণ্ডন করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি’র অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট দিতে প্রতিবার বাজেটের আগে প্যারিস কনসোর্টিয়ামে ছুটে যেতেন সাহায্যের জন্য। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজেট কোনোভাবেই বিদেশি সাহায্যনির্ভর নয়। এ বাজেটে ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে। বিএনপি লুটপাটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তারা পরপর পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল। তাদের মুখে লুটপাটের অভিযোগ শুনলে হাসি পায়।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি বাজেটকে বাস্তববিবর্জিত বলেছে, এ নিয়ে প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেন, গত ১৪ বছরে সিপিডি বাজেটের প্রশংসা করতে পারেনি। এবছর তো বাজেট প্রস্তাব অধিবেশন চলমান থাকা অবস্থায়ই তারা বলেছে, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী, বাজেট বাস্তবায়ন হবে না।

অথচ বাংলাদেশের বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ৯৭ শতাংশ। ডলারের মূল্য না বাড়লে আমাদের মাথাপিছু আয় তিন হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেত। এ সময় দেশের জিডিপি বেড়েছে, দারিদ্র্য ৪১ শতাংশ থেকে কমে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এগুলো তাদের চোখে পড়ে না। আসলে সিপিডিকে তাদের পান্ডিত্য দেখাতে হয় এবং ভুল ধরাটাই তাদের পেশা। এভাবেই তারা নানা জায়গা থেকে ফান্ড পায়। এ কারণেই তারা প্রশংসা করতে পারে না।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের চলতি বাজেট নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবে, ইতিবাচক সমালোচনাকে আমরা সবসময় স্বাগত জানাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত