ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

গৃহকর আদায়ে কমেছে ঝামেলা, মিলেছে স্বস্তি

গৃহকর আদায়ে কমেছে ঝামেলা, মিলেছে স্বস্তি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) গৃহকর নিয়ে কমে এসেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নগরবাসীর কাছ থেকে সহনীয় পরিমাণে গৃহকর আদায়ে চসিক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে জনমনে। পাশাপাশি কয়েক মাস ধরে ‘করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ এর আন্দোলন বিক্ষোভ কর্মসূচিও আর নেই। সর্বশেষ ১৫ মার্চ তারা চসিক ভবন ঘেরাও করতে যায়। কিন্তু এখন সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির। এতে স্বস্তি ফিরেছে নগরবাসীর মধ্যে। তারা বলছেন, সহজ পন্থায় গৃহকর আদায় হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। কোনোভাবেই কমবে না। গেল বছরের মাঝামাঝি থেকে চসিক এর অধীনে সকল গৃহের বর্ধিত কর আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়। চসিকের ৮টি রাজস্ব সার্কেল থেকে হোল্ডিং মালিকদের ধার্য করা গৃহকরের নোটিশ পাঠানো হয়। চসিকের এমন ‘বর্ধিত’ কর আদায়ের কার্যক্রমে জনমনে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে বাড়ির মালিকরা এমন অযৈাক্তিক গৃহকর যেমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। অন্যদিকে নগরীতে বসবাসরত ভাড়াটিয়ারা এ নিয়ে তাদের অসহয়াত্ব প্রকাশ করছেন। অনেক বাড়ির মালিকের দাবি, নগরীর অধিকাংশ ভবন ঋণ বা লোন নিয়ে করা হয়। এ লোনের টাকা প্রত্যেক মাসে কিস্তির ভিত্তিতে শোধ করতে হয়। এখন গৃহকর বাড়ালে তাদের বাধ্য হয়ে বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে আগে যে ভাড়াটিয়ারা থাকত তাদের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। আর যদি নতুনভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় তাতে ভাড়াটিয়া পেতে বেগ পেতে হবে। কারণ করোনাকালে মানুষের আর্থিক অবস্থা এমনিতে নাজেহাল হয়ে গিয়েছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশচুম্বী। এ অবস্থায় বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। যা কারোর জন্য সুখকর নয়। নগরীতে বসবাস করেন এমন কয়েকজন ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘বর্ধিত’ গৃহকরের চাপ ভাড়াটিয়াদের অসহায় করে দেবে। তাদের মাথাগোঁজার শেষ ঠিকানা বলতে আর কিছু আর থাকবে না। নগরীতে এমনিতে নানা অযুহাতে বাড়ি ভাড়া বাড়ছে। তার উপর যদি এমন অযৈাক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে করের বোঝা আরোপ করা হয়, তাহলে তা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দেবে।

জানা গেছে, ৫ অর্থবছর পর চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছর থেকে পুরোনো সেই গৃহকর আদায়ে কার্যক্রম শুরু করে চসিক। সম্প্রতি চসিকের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন শেষে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছওে নগরীর সরকারি-বেসরকারি ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৯ টাকা পৌরকর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়। যা আগে ছিল ১৩১ কোটি ৯১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১ টাকা। অর্থাৎ এক লাফে ৫৪৫ দশমিক ৩২ শতাংশ গৃহকর বৃদ্ধি পায়। তবে নগরবাসীর আপত্তির পর মন্ত্রণালয় স্থগিতাদেশ দেয়ায় ‘বর্ধিত’ সেই গৃহকর আদায় করেনি চসিক। করদাতারা বলছেন, পূর্বে ভবনের মূল্যায়ন করা হতো বর্গফুটের উপর ভিত্তি করে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরেও ভবনের ভাড়া বা আয়ের বিপরীতে এটি রিঅ্যাসেসমেন্ট করা হয়। এতে এক লাফে কর বহু গুণে বেড়ে গিয়েছিল। এখন বর্ধিত সে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু হলে ভবন চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের স্থগিতকৃত গৃহকর মূল্যায়নের আলোকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর থেকে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। এতে গেল বছরের জুলাই মাস থেকে তা কার্যকরের কথা বলা হয়। এরপর গত বছরের ২৭ এপ্রিল

চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম ৮টি পৃথক সার্কেলের কর কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে হোল্ডিং মালিকদের বিল দেয়ার নির্দেশনা দেন। এতে বলা হয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের বিপরীতে গৃহকর ও রেইটের দাবি বিল সংশ্লিষ্ট কর আদায়কারীর মাধ্যমে জারি নিশ্চিতকরণ ও উপ-কর কর্মকর্তা (কর) দাবি বিল জারির বিষয়ে তদারক করবেন। প্রসঙ্গত চসিকের নিজস্ব আয়েরমূল উৎস পৌরকর।

সিটি করপোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে। তারমধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেট এবং ৭ শতাংশ আবর্জনা অপসারণ রেট রয়েছে। এ অনেকে বলছেন, এমন অবিবেচকের মত সিদ্ধান্ত নগর জীবনকে আরো জটিল করেছে। এদিকে গৃহকর বৃদ্ধির পর থেকেই চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছিল আন্দোলন। গৃহকর বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় (নগর ভবন) ঘেরাও করেছিল। কিন্তু চসিক গৃহকর আদায়ে নমনীয় অবস্থান নেয়ায় বাড়ির মালিকরা খুশি। যেভাবে আর্থিক ক্ষতির আতঙ্ক ছড়িয়েছিল তা এখন নেই। বাড়তি গৃহকর দাবি করা হলেও আপিলে সহনীয় মাত্রায় কর ধার্য্য হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত