ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধানমন্ত্রী

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাথাব্যথা নেই

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাথাব্যথা নেই

আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাথাব্যথা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরো অনেক দেশ-মহাদেশ আছে, আমরা সেখানে যাতায়াত করব, বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে, চাঙা হবে।

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আওয়ামী লীগ ভবন’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্থায়ী অফিস পেল ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের নিষেধাজ্ঞা দেবে তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়। ২০ ঘণ্টা জার্নি করে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকা যাওয়ার প্রয়োজন নেই আমাদের।

দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কয়লা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, কয়লা কিনতে সমস্যা হচ্ছে। তবে দ্রুতই গ্যাস আমদানির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বিদ্যুৎ পেয়ে অভ্যস্ত। তাই হঠাৎ বিদ্যুতের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এদেশে মাটি ও মানুষের সংগঠন। জনগণের স্বার্থে এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশ ও মানুষের কল্যাণ হয়। এরইমধ্যে সেটার প্রমাণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে। আমাদের মাটি-মানুষ, ভৌগোলিক পরিবেশ, প্রাকৃতিক অবস্থান সবকিছু বিবেচনা করে প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। আজকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা দিয়েছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় বাজেট আর কেউ দিতে পারেনি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে; দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বাজেট ঘোষণা করেছি। ইনশাআল্লাহ, আমরা এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব। দেশবাসী আমাদের সঙ্গে আছে। যারা সমালোচনা করছেন, তাদের অভ্যাসই সমালোচনা করার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। বিশ্বব্যাপী জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায়ও আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নেয় বলে এটা সম্ভব হয়েছে। মানুষের কল্যাণ-মঙ্গলের বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করি। আজকে দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নতি করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ডেলটা প্ল্যানও আমরা করে দিয়েছি, যাতে জলবায়ুর প্রভাব থেকে দেশটা রক্ষা পায়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুন্দরভাবে চলতে পারে সে পরিকল্পনা করে দিয়েছি।

আমেরিকাকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভোট যারা চুরি করে, ভোট নিয়ে যারা চিরদিন খেলছে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, আমি তাদের (আমেরিকা) বলব ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দিন। কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সন্ত্রাসী ও দুর্নীতির দায়ে আমেরিকা তারেক জিয়াকে ভিসা দেয়নি। বিএনপি আবার আমেরিকার কাছে ধরনা দেয়। আওয়ামী লীগসহ সমমনা দল নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র অর্জন করেছি। যার ফলে আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অনেক কিছু অর্জন করে দিয়ে গিয়েছিলাম। ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আমাদের সরকারে আসতে দেয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি, আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ করতে পারেনি। ফলাফল পরিবর্তন করে আমাদের হারানো হলো। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দেশ সন্ত্রাসীদের রাজ্যে পরিণত হলো। বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হলো। ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় বোমা হালমা হলো। বাংলাভাইসহ জঙ্গি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হলো। দেশ যেন লুটের রাজত্ব হলো। এগুলোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা হলো। আমার বিরুদ্ধেও ১২টা মামলা দেয়া হলো। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সমানে আমাদের নেতাকর্মীদের উপরে হামলা চালাল।

জনগণের উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধান বলেন, জনগণ জানে একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, উন্নয়ন পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে। জনগণের কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার করলে জনগণ কিন্তু সেটার মর্যাদা দেয়। এই কথাটাই মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে এসেছে, ভোগে বিশ্বাস করে না। সেই কথাটা মাথায় রেখে জনগণের সেবক হিসেবে আমি কাজ করে যাচ্ছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। অশুভ শক্তি বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এদের করাল গ্রাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

তেজগাঁও একসময় শুধু শিল্পনগরী ছিল, সেটাকে আমরা বাণিজ্য নগরীতে রূপান্তর করে এটাকে আরো উন্নত করে দিয়েছি। এখানে ট্রাকস্ট্যান্ডের অভাব। আমার অফিসের মুখ্যসচিবকে বলেছি, জায়গা খুঁজতে, জায়গা পেলে অত্যাধুনিক ট্রাকস্ট্যান্ড আমরা করে দিব বলেও যোগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে অধিকার সবারই থাকবে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও এখানে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী অফিসের এস্পেস বণ্টন করা হবে। এই অফিসকেই নির্বাচনি অফিস হিসেবে ব্যবহার করব। ওপরে মিটিং রুম হবে, যারা মিটিং করবে তারা ভাড়া দিবে। কেউ বিনা ভাড়ায় পাবে না। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিনা ভাড়ায় পায় না। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সবাইকে ভাড়ার টাকা দিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বেনজির আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, দলটির সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও হামিম গ্রুপের চেয়ারম্যান একে আজাদ। অফিস উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সকাল থেকে ঢাকা জেলার বিভিন্ন উপজেলার দলীয় নেতাকর্মী এসে জড়ো হয় তেজগাঁও শিল্প এলাকায়। এ সময় নেতাকর্মীদের চোখেমুখে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গণভবন থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে নেতাকর্মীরা মিছিলসহ অপেক্ষা করতে থাকেন।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত